Jumjournal Logo

Search

Menu

স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র প্রসঙ্গে – শ্রী তাতিন্দ্র লাল চাকমা

Jumjournal

Last updated Sep 7th, 2025

9

featured image

সম্প্রতিক কালে স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র প্রদানের বিষয়টি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গন যথেষ্ট সরগরম হয়ে উঠেছে। তা হবার কারণ হচ্ছে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদসমূহে প্রাইমারী শিক্ষা বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের শুন্যপদে লোক নিয়োগের বিষয়ে যে সার্কুলার দেয়া হয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে “স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র জেলা প্রশাসক ও তার পাশাপাশি সার্কেল চীফও দিতে পারবেন।” কথাটা আপাতঃ দৃষ্টিতে অত্যন্ত সামান্য কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে জুম্ম সমাজে এই বিষয়টি কিভাবে প্রভাব বিস্তার করবে তাই নিয়েই সচেতন মহলের মধ্যে গড়ে উঠেছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা । এই বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বাক বিতন্ডা চলছে যথেষ্ট । এই যে বাক বিতন্ডা, এই যে সামান্য বিষয় জুম্ম সমাজে কেন চলে আসলো তা নিয়ে কিছু ভাবার দাবী রাখে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ঐসব কর্তৃপক্ষের কাছে বিক্ষোভ মিছিলসহযোগে স্মারকলিপি প্রদান করেছে । ঐ স্মারক লিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধি, পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধিত) আইন ১৯৯৮ইং এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৯৮ইং সহ অন্য কোন আইনে পার্বত্য জেলাসমূহের জেলা প্রশাসকগণকে স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র প্রদান করার ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বরং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ (সংশোধিত) আইন ১৯৯৮ইং এর ২(কক) ও ৪(৬) ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা ক্ষেত্রমত পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট এর ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ প্রদান করবেন। এজন্য বিগত সময়ে বান্দরবান খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলাপরিষদ কর্তৃক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহের শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে উপরোক্ত আইন অনুসরণ পূর্বক স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র শুধুমাত্র সার্কেল চীফ কর্তৃক ইস্যু করার বিধান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে রাখা হয়েছিল। জে এস এস এর এই দাবী যেমনি যুক্তিসিদ্ধ তেমনি আইনসঙ্গতও কিন্তু তা সত্বেও এই আইন লঙ্গন করতে অনেকে দ্বিধা করছে না।

 

স্মারকলিপি গ্রহন করতে গিয়ে রাঙ্গামাটি জেলার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডঃ মানিকলাল দেওয়ান বলেছেন চুক্তির ঐ বিষয়টি শুধুমাত্র নির্বাচনের জন্য প্রযোজ্য এবং তিনি যেহেতু সরকারের লোক সরকারের নির্দেশ অমান্য করতে পারবেন না। অথচ জেলাপরিষদ চেয়ারম্যান হওয়ার আগে ঐ দাবীর প্রতি তার সমর্থন ছিল সাংঘাতিক। কিন্তু ক্ষমতার স্বাদে তিনি আজ তারই বিপরীত গানে সুর ভাজলেন । জুম্ম শিক্ষিত উচ্চশিক্ষিত লোক উচ্চ মানের সচেতন লোকদের কাছে আজকের নতুন প্রজন্ম এরকম ব্যবহার দেখে কি শিখবে? অথচ চুক্তির এই সামান্য কথাটির মর্মার্থ বুঝে না এমন লোক পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মদের মধ্যে কমই পাওয়া যাবে। কারণ এই সামান্য কথা কয়টির মধ্যে জুম্মজনগণের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক অধিকার তথা জাতির অস্তিত্ব টিকে থাকা নির্ভর করছে। তার অকাট্য কারণ হচ্ছে স্থায়ী বাসিন্দার সার্টিফিকেট যদি জেলা প্রশাসক দিতে পারে তাহলে বিগত সময়ের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হবে । কারণ ১৯০০ সালের শাসন বিধি অনুসারে জেলা প্রশাসককে যাবতীয় ক্ষমতা দেওয়ার কারণে ক্রমান্বয়ে বহিরাগত বাঙ্গালীদের অনুপ্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছিল ।

 

উল্লেখ্য যে ১৯৪৭ সালে জনসংখ্যার হিসাবে বহিরাগত বাঙ্গালী ছিল শতকরা তিনজনেরও কম। কিন্তু ১৯৯৫ সালে এসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শতকরা ৪৯জনেরও বেশী। প্রসঙ্গত আরো উল্লেখ করে বলা যায় সত্তর দশকের পার্বত্য চট্টগ্রামের জেল, প্রশাসক ছিলেন আলী হায়দার খান। তাকে প্রশংসা করতে অনেক বাঙ্গালী ছাড়াও সামন্তনেতাদের মুখেও শোনা যায়। কিন্তু তিনি সত্তর দশকের শেষভাগে পার্বত্য চট্টগ্রামের সশস্ত্র আন্দোলনকে ঠেকাতে না পেরে (পার্বত্য চট্টগ্রামে) ব্যাপক হারে বাঙ্গালী অনুপ্রবেশ ঘটাবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর সে কাজটি সম্পাদন করেছিল তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনা কর্মকর্তারা। এসব ঘটনা বেশী দিন অতীতের ঘটনা নয়। তারপরেও আধুনিক সভ্যজনেরা সহসা এই ইতিহাস ভুলে যায়। যেমনটি ভুলে গিয়েছিলেন বিগত সময়ের পার্বত্য মন্ত্রী কল্পরঞ্জন চাকমা। বিগত ১৯৯৭ সনের চুক্তির পর খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলায় যে সব চাকুরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল তাতেও এই আইন অনুসরন করা হয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে ঐ কলঙ্কিত মন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন যে সার্কেল চিফের পাশাপাশি জেলা প্রশাসকও এই স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র দিতে পারবেন । যতদুর জানা যায় ঐ সময় মন্ত্রীর আয়ুস্কাল ফুরিয়ে আসছিল । তখন তার দুটো সমস্যা- একটা হচ্ছে তার এক ছেলেকে বিদেশে পাঠানো, দ্বিতীয় সমস্যা পরবর্তী নির্বাচনে সংসদ সদস্যপদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া। পরবর্তীতে দেখা গেল তথাকথিত মন্ত্রীর ঐ লিখিত নির্দেশ (স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র সম্বলিত নির্দেশ) দেয়ার পর তার ছেলের যেমন বিদেশে যাওয়া হয়েছে তেমনি তিনি খাগড়াছড়ি আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিদ্ধন্ধিতা করতে পেরেছেন। অবশ্য তিনি এর পরিনতিও ভোগ করেছেন। তিনি পুর্নবার নির্বাচিত হবার জন্য বহু দান দক্ষিনা করেছেন, বনবিহার উন্নয়নের পর উন্নয়ন করেছেন, মসজিদ, মন্দিরের উন্নয়ন করতে প্রানান্ত চেষ্টা করেছেন কিন্তু চুরি করা জিনিস দিয়ে যতই ধৰ্ম্ম কর্ম করা হোক তার পূন্যার্জন সম্ভব হয় না। তিনি তার অপকর্মের যে পাপ করেছেন জুম্ম জনগণের ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক অধিকার এবং জাতীয় অস্তত্ব টিকিয়ে রাখার দাবীর বুকে যেভাবে কুঠারাঘাত করেছেন তাতে জুম্মজনগন তাকে ক্ষমা করেনি । তাকে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। আজ তিনি খাগড়াছড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তার যত দম্ভ, যত ক্ষমতা, যত ধৰ্ম্ম কৰ্ম সবই ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে। কিন্তু সমাজের চিত্র বড়ই বিচিত্র। এক কল্পরঞ্জনের পরিনতি তাই হলেও আরো নানা কল্পরঞ্জনের আর্বিভাব ঘটে চলেছে । জুম্মদের প্রবাদ আছে “একহাতে মারা শক্তিশেল-দুইহাতে খোলা যায় না।” ঐ কল্পরঞ্জনের জুম্ম জনগনের বুকে মেরে যাওয়া শক্তিশেল খোলার জন্য ইতিমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

 

শ্রী তাতিন্দ্র লাল চাকমা
শ্রী তাতিন্দ্র লাল চাকমা

 

খাগড়াছড়ি এলাকাবাসীর পক্ষে প্রধান মন্ত্রীকে দেয়া স্মারকলিপিতে জুম্ম জনগণ উল্লেখ করেছে অতীতে ১৯০০ সালের শাসন বিধি পার্বত্য চট্টগ্রাম স্থায়ী শান্তি আনতে পারেনি। কথাটার মধ্যে ঐতিহাসিক সত্য পরিস্ফুত হয়েছে। এজন্যই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে শুধু উপজাতীদের জন্য নয় অউপজাতীদের জন্যও সুনির্দিষ্ট আসন সংরক্ষন করা হয়েছে। সুতরাং এই চুক্তি কখনও একতরফা নয়। বরঞ্চ এই স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র প্রদানের বিষয়টি বরখেলাফ করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে আগের মতই বহিরাগতদের অনুপ্রবেশের সুযোগ দেয়ার ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্রকে অবাধে চালিয়ে যেতে দেয়া হলে অচিরেই পার্বত্য ভুমিতে জুম্মজনগন সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। আর সংখ্যালঘু হয়ে পড়ার অর্থ স্থানীয় নির্বাচনে সকলক্ষেত্রে জুম্মদের বঞ্চিত হওয়া, একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হতে না পারা। এটা ইসলামী সম্প্রসারনবাদীরা পার্বত্য চট্টগ্রামে কায়েম করতে চায়। আর জুম্ম জনগণ চায় নিজেদের জায়গায় নিজেদের সংখ্যাগরিষ্টতা বজায় রাখার মাধ্যমে রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক্য অধিকার বাস্তবায়ন করতে। এটা জুম্ম জনগণের মৌলিক অধিকার। এই অধিকারের জন্য স্মারকলিপি দিতে গিয়ে দেখা গেছে সমাজের একটা অংশ ঐ স্মারলিপিতে স্বাক্ষর দিতে চায়নি। কেউ কেউ স্বাক্ষর দিলেও মিছিলে যেতে রাজী ছিল না । কেউ কেউ সাফ বলে দিয়েছে যে তারা সরকারী দলের লোক । সুতরাং তারা স্বাক্ষর দিতে পারবে না । আমরা বলাবলি করি সরকারী দল চিরদিনতো সরকারী দল থাকে না একদিন তাদেরও বিরোধী দলে যেতে হয় তখন এই সব তথাকথিত সরকারী দলের লোকদের পরিণতিও কি কল্পরঞ্জনের মতই হবে? মানুষের সাধারণ ধারনা শিক্ষিত লোকেরা বুঝেও সচেতন হয় কিন্তু না, রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে তা ঠিক নয় ।

মানুষ যতই শিক্ষিত হোক তার চিন্তা চেতনা যদি পশ্চাৎপদ হয় তারা কখনও অগ্রগামী হতে পারে না, সচেতন হতে পারে না । বরঞ্চ ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে অমানুষ হতে পারে, প্রভুর পদলেহন করতে পারে । কিন্তু জনগন শেষপর্যন্ত তাদেরকে প্রত্যাখান করে । শেষ বিচারে তারা সমাজে সমাদর পায়না আর ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয় । কিন্তু জুম্ম জনগণ আর ধ্বংস হতে চায়না। তারা চায় নিজেদের আবাস ভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে টিকে থাকতে । এ জন্যই বিগত তিরিশ বছর ধরে সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করে নিজেদের আত্মবলিদান দিয়েও নিজেদের স্বাতন্ত্র্য অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সংগ্রামে নিয়োজিত আছে। এই আন্দোলনেরই সামান্য অর্জন স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র নিজেদের মুরুব্বীদের মাধ্যমে প্রদানের বিষয়। এই বিষয়টি বাদ দেয়ার যে কোন ফন্দি ও ছল চাতুরীকে জুম্ম জনগণ রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র মনে করে । এই ষড়যন্ত্রে শুধু শাসকগোষ্ঠী নয় তার সাথে স্থানীয় জুম্ম স্বার্থবাদীরাও জড়িত। আর কারা জড়িত? ১১/১০/২০০২ ইং তারিখে গুচ্ছগ্রামবাসী বাঙ্গালীরা মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে এক স্মারক লিপি দিয়েছে। ঐ স্মারক লিপিতে তারা পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছে, “যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, আমরা নিম্মে স্বাক্ষরকারীগণ পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হই।” এই স্মারক লিপিতে তারা গুচ্ছ গ্রামবাসীদের রেশন প্রদানের জন্য আবেদন করেছিল । একদিকে রেশন প্রদানের দাবী করেছে অন্যদিকে স্থায়ী বাসিন্দা দাবী করেছে অথচ প্রকৃত স্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য কোন সরকারী রেশন দেয়া হয় না। এই সব গুচ্ছগ্রামবাসীকে আজ স্থায়ী বাসিন্দার আইনী বৈধতা দেয়ার জন্যই চলেছে এইসব ষড়যন্ত্র । এই ষড়যন্ত্র সফল হলে জুম্ম জনগণ নিজেদের আবাসভূমিতে নিজেরাই সংখ্যালঘু হড়ে পড়বে এবং কোনদিন কোন নির্বাচনে জয়ী হয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরার সুযোগ পাবে না । এজন্য ইতিমধ্যেই তারা দম্ভভরে বলতে শুরু করেছে যে, আগামীতে সকল সময়ের জন্য সংসদ সদস্যপদে তাদের বিজয়ী হতে কোন অসুবিধা নেই।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্মরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকলে সমগ্র বাংলাদেশের জন্য কোন সমস্যা হতে পারে না। অপরদিকে জুম্মরা সংখ্যালঘু হয়ে পড়লে নিজেদের স্বাতন্ত্রতা বজায় রাখা দুরের কথা কোন রাজনৈতিক পদে তারা নিজস্ব লোক নির্বাচিত করতেও পারবেনা। তার অর্থ গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে জুম্মদের বঞ্চিত হওয়া আর কোন রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকার না থাকার অর্থ অবশেষে নিজেরাই ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই ধ্বংস হওয়া ও টিকে থাকার প্রশ্নের সাথেই জড়িত এই স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র প্রদানের বিষয়টি। এই বিষয়ে জুম্ম জনগণ কখনও নীরব থাকতে পারেনা। আর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবে জনসংহতি সমিতিও প্রতিবাদ না করেই পারে না। কারণ চুক্তির ‘ক’ খন্ডের ১নং ধারায় লেখা হয়েছে “উভয়পক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করিয়া এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট সংরক্ষণ এবং এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করিয়াছেন।” কিন্তু স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র সরকার ঘোষিত নিয়মে প্রচলন হলে কিছু দিনের মধ্যেই পার্বত্য চট্টগ্রাম আর উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল না হয়ে বহিরাগত অধ্যুষিত অঞ্চলে পরিণত হবে, এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট বদলে যাবে। আর সেকারণে ‘খ’ খন্ডের ৩নং ধারায় অত্যন্ত সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে “অউপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা” বলিতে যিনি উপজাতীয় নহেন এবং যাহার পার্বত্য জেলায় বৈধ জায়গা জমি আছে এবং যিনি পার্বত্য জেলায় সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় সাধারনতঃ বসবাস করেন তাহাকে বুঝাইবে।” এই ধারায় বর্ণিত বৈধ জায়গা জমি আছে কি নেই তা বাছবিচার করার সুবিধার্থে প্রধানতঃ হেডম্যান ও সার্কেলচীফকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহ্যগতভাবে এই কৰ্তৃপক্ষই জমি জমা খাজনা আদায়ের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া অন্য কোন কর্তৃপক্ষকে ঐতিহাসিক কারণে জুম্ম জনগণ এ দায়িত্বে নির্ভরযোগ্য মনে করতে পারেন না ।

 

লেখকঃ শ্রী – তাতিন্দ্রলাল চাকমা পেলে

প্রসঙ্গ:তাতিন্দ্রলাল চাকমা পেলে

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা

স্থায়ী বাসিন্দার সনদপত্র প্রসঙ্গে – শ্রী তাতিন্দ্র লাল চাকমা