Last updated Oct 8th, 2025
2
পাহাড়ি জাতীয় সংগ্রামের সাথে নারীমুক্তি আন্দোলনের পদযাত্রা
১৯৬০ সালের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামের দশটি ভিন্ন ভাষাভাষী পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন সূচিত হয়। এ আন্দোলনের অগ্রদূত তথা জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জনসংহতি সমিতির ইশতেহারে নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়েছেন। একাধারে পারিবারিক জীবনে পুরুষের আধিপত্য এবং জাতীয় জীবনে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার চরম শিকার পাহাড়ি নারীসমাজের মধ্যে এই দ্বৈত অত্যাচার নিপীড়নের মধ্যেও এম এন লারমা এক দুর্বার সংগ্রামী শক্তি প্রত্যক্ষ করতেন। পাহাড়ি নারীসমাজকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করার অপরিহার্যতা তিনি গভীরভাবে অনুভব করতেন।
সত্তর দশকে পাহাড়ি নারীসমাজকে পুরুষদের আধিপত্য ও পারিবারিক দাসত্ব থেকে মুক্তির মহানপ্রয়াসে অধিকার সচেতন করে সংগঠিত করবার রাজনৈতিক প্রয়াস গড়ে ওঠে। রাজনৈতিকভাবে উপলব্ধ হয় যে, সমাজের অর্ধেক অংশই নারী। এই অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে অধিকার সচেতন করে উকুদ্ধ করতে না পারলে জাতীয় অগ্রগতি ত্বরান্বিত হতে পারে না।
নারীসমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই প্রকৃত নারীমুক্তির পথ উন্মুক্ত হতে পারে। অতএব উগ্রসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনসহ পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে পাহাড়ি নারীসমাজকে শামিল করার উদ্যোগ গ্রহণ শুরু হয়। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচারণার মধ্যদিয়ে পাহাড়ি নারীসমাজকে রাজনৈতিক সংগ্রামে উজুদ্ধ ও শামিল করার প্রচেষ্টা অব্যাহত গতিতে চলতে থাকে। সত্তর দশকের মাঝামাঝি থেকে পাহাড়ি নারী জাগরণ সংঘবদ্ধ ও জোরালোভাবে শুরু হয়।
পাহাড়ি নারীদের সংগঠিত করে শক্তিশালী নারী সংগঠন গঠনের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। ১৯৭৩ সালের প্রারম্ভে এক পর্যায়ে মহিলা সংগঠনের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে অগ্রগামী পাহাড়ি নারীদের নিয়ে একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে আঞ্চলিক সাংগঠনিক কমিটি গঠিত হতে থাকে। অবশেষে ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫-এ ‘পার্বত্য চট্টগ্রামমহিলা সমিতি’ নামে পাহাড়ি নারীদের একটি নিজস্ব রাজনৈতিক সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে ।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির ইশতেহারে বলা হয়েছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাজব্যবস্থা মূলত; সামন্ততান্ত্রিক পিতৃপ্রধান মতাদর্শ ও ব্যবস্থার উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী জাতি সামন্তবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও উগ্র সাম্প্রদায়িক শাসন, শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন ছাড়াও পুরুষদের দ্বারা শাসিত হওয়ার ফলে অকথ্য নির্যাতন, নিপীড়ন ও অমানুষিক অত্যাচার ভোগ করতে বাধ্য হচ্ছে । নারীজাতি পরনির্ভরশীল হওয়া তে সমাজ জীবনে অপাংক্তেয়, অবহেলিত ও ভোগ্যবস্তু হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। অথচ নারী ও পুরুষ যদি সম্মিলিতভাবে সংগ্রামমুখী না হয় তাহলে সকল প্রকারের শোষণ ও ভেদাভেদ নির্মূল করার কোনো কল্পনাই করা যায় না। নারীর সৃজনী প্ৰতিভা ওসংগ্ৰামমুখী না হয় তাহলে সমাজ জীবন হতে ৭গামী ভূমিকা যে পুরুষের সংগ্রামী জীবনে অপরিহার্য এ কথা বিশ্বের দেশে দেশে বার বার প্রমাণিত।হয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি নারী জাতিকে অগ্রসর করতে না পারলে কোন দেশ বা জাতিকে সকলপ্রকারের জাতিগত ও শ্রেণীগত অন্যায় শাসন ও শোষণ থেকে মুক্ত করা অসম্ভব। তাই নারী জাতিকে উন্নয়নকল্পে ও গঠনমূলক সংগ্রামে অংশীদার করানোর মাধ্যমে বিশ্বের নিপীড়িত ওনির্যাতিত মানুষের সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা পালন করার পূর্ণ সুযোগ উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির গঠনতন্ত্র প্রণীত হয় ১৯৭৫ সালে । গঠনতন্ত্র মোতাবেক এই সংগঠনের প্ৰথম কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয় ১০ আগস্ট ১৯৭৫-এ। চেঙ্গী, মাইনী, কাচালং অঞ্চল থেকে আগত মোট ৬৫ জন মহিলা এ সম্মেলনে প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। এই সম্মেলনে শ্ৰীমতী মাধবীলতা চাকমাকে সভানেত্রী, শ্রীমতী জয়শ্রী চাকমাকে সাধারণ সম্পাদিকা, শ্রীমতী দিপ্তী চাকমাকে সাংগঠনিক সম্পাদিকা ও শ্রীমতি জড়িতা চাকমাকে সাংস্কৃতিক ও প্রচার সম্পাদক করে চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে মাইনী, চেঙ্গী ও কাচালং অঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির ৩(তিন)টি আঞ্চলিক কমিটি গঠন করা হয়। ক্রমান্বয়ে এই আঞ্চলিক কমিটিসমূহের নেতৃত্বে তৃণমূল পর্যায়ে বহু গ্রাম কমিটি গঠন করা হয়।
সশস্ত্র আন্দোলনে পাহাড়ি নারীর অংশগ্রহণ
১৯৭৬ সালের জানুয়ারি মাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি নারীসমাজের জন্য আরো একটি ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনা হয়। ওইসময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সদস্যদের প্রথম রাজনৈতিকও সামরিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয় জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। ৩৫ জন সদস্য ওই প্রশিক্ষণে অংশ নেন । রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সামরিক প্রশিক্ষণ কোর্সও শুরু হয়েছিল। পাহাড়ি নারীদের এটাই প্রথম সামরিক প্রশিক্ষণ। এই সামরিক প্রশিক্ষণ ছিল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিছক আত্মরক্ষার জন্যই । সম্মুখ সমরে শক্রর মোকাবিলা করার পরিকল্পনা এতে যুক্ত ছিল না । সব মিলে সশস্ত্র আন্দোলন পর্যায়ে এই রাজনৈতিক ও সামরিক প্রশিক্ষণ বিশেষ কাজে লেগেছিল। বাইরে গণসংগঠন গড়ে তোলা, শক্র ও প্রতিক্রিয়াশীলদের ধোকা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ, সর্বোপরি কর্মীবাহিনীর নিরাপত্তা বিধানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক হয়েছিল।
পাহাড়ি নারীমুক্তি আন্দোলনের এই অগ্রযাত্রা কিন্তু সহজ সরল পথে এগোয়নি । নানা বাধাবিপত্তির দিয়ে আঁকাবাকা পথে এগোতে হয়েছে। রক্ষণশীল জুম্ম সমাজ নারীসমাজের এই বহির্মূখী পদচারণা সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি। সমাজসদস্যদের নানা কটবাক্য ও উপহাস এসব পাহাড়ি নারীকর্মীদের শুনতে হয়েছে। নারীকর্মীদেরকে নানা অভিধায় আখ্যায়িত হতে হয়েছে। মাতাপিতা, অভিভাবক, স্বামী, সর্বোপরি পুরুষের নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও সামন্ত সমাজের প্রতিক্রিয়াশীলতা ও রক্ষণশীলতা উপেক্ষা করে অত্যন্ত সুকৌশলে নারীরা রাজনৈতিক আন্দোলনে সমবেত হতে থাকে।
সশস্ত্র আন্দোলনের গতি যতই জোরদার হতে থাকে শাসকগোষ্ঠীর দমন পীড়নের মাত্রাও তত বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৭৬ থেকে সশস্ত্র আন্দোলন জোরদার হলে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে হাজার হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নিয়োগ করতে থাকে। ফলে সশস্ত্র বাহিনীর দমন-পীড়ন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সরকার সামরিক কার্যক্রমের সাথে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল সংগঠন গড়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলন ভেস্তে দেয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়। এ সময় নারীকর্মীদের নিরাপত্তা ও চলাফেরা এবং মহিলা সমিতির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এর ফলে আন্দোলনের এক পর্যায়ে মহিলা সমিতির কার্যক্রমের ক্ষেত্র ধীরে ধীরে সীমিত হতে থাকে। এমতাবস্থায় সমিতির কাজকর্ম পার্টির কর্মী পরিবারসমূহের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে যায়।
নারী আন্দোলনের অন্যতম নেতা বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সদস্য মাধবীলতা চাকমা বলেন, সত্তর দশকে যে নারী জাগরণের উত্তাল ঢেউ পার্বত্য চট্টগ্রামের আনাচে কানাচে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে, তার ফলে পাহাড়ি নারীর মুক্তি বা অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। পাহাড়ি নারীসমাজের এক ক্ষুদ্র অংশের মধ্যে অধিকার সচেতনতা এবং কঠোর সংগ্রামী প্রত্যয় সৃষ্টি হবার পেছনে এটা একটা বড়ো কারণ।
সশস্ত্র আন্দোলনের সময় বহু পাহাড়ি নারী জীবনের ঝুকি নিয়ে গুপ্ত সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা শ্রীলতাহানি, নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও পাহাড়ি নারীরা সংঘাতকালে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নারীরা বিশেষ করে যোদ্ধাদের জন্য তথ্য, চিঠিপত্র ও অন্যান্য গোপন দলিল বহনের ব্যাপারে সক্রিয় সমর্থন ও সহযোগিতা যুগিয়েছে। তাছাড়া তারা খাদ্য সরবরাহ, আহতদের সেবাশুশ্রুষা দান ও বিনা পারিশ্রমিকে বস্ত্র তৈরি করে দেয়ার মাধ্যমেও অবদান রেখেছে। বিদ্রোহকালে আদিবাসী নারীরা বিপুল পরিমাণভূমিকা পালন করলেও তারা জাতীয়ভাবে ও পুরস্কৃত হয়নি, তাদের নিজেদের সমাজ থেকে ও আনুষ্ঠানিক কোনো স্বীকৃতি দেয়া হয়েনি। বিদ্রোহী তৎপরতায় আদিবাসী নারীদের ভূমিকা বহুলাংশে অদৃশ্যমানই রয়ে গেছে। জনসংহতি সমিতির অস্ত্র জমাদানকারী সদস্যদের তালিকায় একমাত্র মাধবীলতা চাকমা ব্যতীত অন্য নারীকমীদের ঠাঁই হয়নি। ফলে তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয় বলে অনেক নারীকর্মী অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
গণআন্দোলনে পাহাড়ি নারী
পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিবর্তিত অবস্থার প্রেক্ষাপটেও পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি নানা কৌশল অবলম্বন করে স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সদা সচেষ্ট ও ও সক্রিয় রয়েছে। এর পাশাপাশি সত্তর দশকের নারীসমাজের জাগরণের ধারাবাহিকতা হিসেবে ১৯৮৮ সালের ৮ মার্চ গৌরি চাকমা ও শিলা চাকমার নেতৃত্বে হিল উইমেন্স ফেডারেশন নামে আরেকটি নারী সংগঠন আত্মপ্রকাশে সক্ষম হয়ে উঠে। জন্মলগ্ন থেকেই হিল উইমেন্স ফেডারেশন পাহাড়ি গণ পরিষদ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের প্রশাপাশি গণতানিকভাবে তার কার্যক্রম শুরু করে। মহাবিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তারা সংগঠন গড়ে তোলে।
১৯৯৫ সালের ১৫ জানুয়ারি এই সংগঠনের প্রথম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই এইনারী সংগঠন নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাহাড়ি নারীসহ পাহাড়ি জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের সামরিক সন্ত্রাসের দ্বারা পার্বত্য চটগ্রামে পাহাড়ি নারী জাতির ওপর যে নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে, তার বিরুদ্ধেও এই সংগঠন দেশে বিদেশে সোচ্চার হয়ে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনে তৎপর রয়েছে ।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পর থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্রগ্রাম মহিলা সমিতি পাহাড়ি নারীসমাজকে সংগঠিত করা এবং পাহাড়ি নারীর ওপর মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তি বাস্তবায়নে এই উভয় নারী সংগঠনই জোরালো ভূমিকা পালন করে চলেছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাহাড়ি নারী
১৯৯৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বেইজিংএ অনুষ্ঠিত বিশ্ব নারী সম্মেলনে উইমেন্স ফেডারেশনের দুই সদস্য একটি বেসরকারি প্রতিনিধিদলে যোগ দিয়ে পাহাড়ি নারীদের অবস্থার কথা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন। তারা বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত নারী সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী পাহাড়ি নারীর প্রতিনিধিত্ব করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর আদিবাসী পাহাড়ি নারীদের পক্ষে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলন, সেমিনার ও কর্মশালায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পার্বত্য চুক্তির পর জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অধীনে অধুনাবিলুপ্ত আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিষয়ক ওয়ার্কিং গ্রুপ, আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক খসড়া ঘোষণাপত্র সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপ ও মানবাধিকার সাব-কমিশনের অধিবেশনে অনেক পাহাডি নারী যোগদান করেন। এর ফলে মানবাধিকার এবং বিশেষ করে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া বিষয়ে অনেক আদিবাসী পাহাড়ি নারী অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হন।
এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত মানবাধিকার, বিশেষ করে আদিবাসী অধিকার, আদিবাসী নারী অধিকার সংক্রান্ত সম্মেলন, সেমিনার, প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আদিবাসী নারী অধিকার কর্মীদের যোগদান করার সুযোগ হয়েছে বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর গড়ে ওঠা পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে অনেক আদিবাসী পাহাড়ি নারীই এসব আন্তর্জাতিক ফোরামে যোগদান করেন। সীমিত পর্যায়ে হলেও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আদিবাসী পাহাড়ি নারীর অংশগ্রহণ আদিবাসী পাহাড়ি নারীর অধিকার সচেতনতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের আদিবাসী নারী সংগঠনের সাথে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, আদিবাসী পাহাড়ি নারীর উপর চলমান সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ জোরদার করা, সহিংসতা প্রতিরোধে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অনেক অগ্রগতি ঘটেছে বলেআদিবাসী পাহাড়ি নারীকর্মীরা দাবি করেছেন। এটা অনেকটা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ফলে অর্জিত অনুকূল পরিবেশের কারণে সম্ভব হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী নারী সংগঠনের পদচারণা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি উন্নয়নের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়নের ক্ষেত্র হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভিত্তিক স্থানীয় বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা (এনজিও) গড়ে উঠে। তারই অংশ হিসেবে অনেক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী নারী সংগঠনও পার্বত্য চট্টগ্রামে জন্মলাভ করে। এসব নারী সংগঠন নারীসমাজের সক্ষমতা গড়ে তোলা, তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা, নারীশিক্ষার প্রসার, নারীর স্বাস্থ্যসেবা ও পরিচর্যা, নারীর কর্মসংস্থান, গ্রামীণ দুস্থ নারীদের আয়বর্ধনমুলক, ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক কাজে উৎসাহিত করা, পাহাড়ি নারীর ওপর চলমান পারিবারিক, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা ইত্যাদি কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ের অনেক নারী সংগঠনও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী নারী সংগঠনসমূহকে সহায়দা প্রদান এবং অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একযোগে কাজ করতে এগিয়ে আসে। বাংলাদেশ নারী প্রগতিসংঘ, নারীপক্ষ, দুর্বার নারী নেটওয়ার্ক, নিজেরা করি ইত্যাদি জাতীয় নারী সংগঠন এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে বাংলাদেশ নারী প্ৰগতি সংঘ নিজেরা সরাসরি না করে স্থানীয় সংগঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে, যাতে স্থানীয় সংগঠনগুলোর সক্ষমতা গড়ে ওঠে। জাতীয় ও স্থানীয় নারী সংগঠনগুলোর এসব কাজ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
প্রসঙ্গ:আদিবাসী, পার্বত্য চট্টগ্রাম, পাহাড়ি নারী
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।