Jumjournal Logo

Search

Menu

ত্রিপুরা লোককাহিনী: কথা বোলো না

Jumjournal

Last updated Jan 17th, 2020

897

featured image

এক জমিয়া বাস করত একটি ছোট গ্রামে। স্ত্রী আর দুই মেয়ে নিয়ে তার সংসার। তার মেয়ে দুটি ছিল খুবই সুন্দর। গৃহকাজেও তারা ছিল খুবই পটু। তাঁতের কাপড় বোনার কাজে তাদের দক্ষতার জুড়ি নেই।

এত গুণের কারণে প্রতিবেশীরা তার মেয়ে দুটোকে তুলনা করত মায়লুমা আর খুলুমা’র সঙ্গে। মায়লুমা হল ধানের দেবি আয় খুলুমা হল তুলার দেবি।

মেয়ে দুটির মধুর ব্যবহারের কারণে গ্রামের সবাই তাদের খুব ভালোবাসত। মেয়ে দুটি বড় হল। জুমিয়া ওদের বিয়ের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়ল।

জুমিয়া ছিল গরিব। তার ছিল এক টুকরো জুমখেত। গত কয়েক বছর জুমখেতে ফলন ভালো হয়নি। তাই খুব কষ্টে তার দিন চলত।

মেয়ে দুটি মা-বাবাকে খুব ভালোবাসত। এই ছোট্ট ঘর, এই গ্রাম, পাহাড়, পাহাড়ি ঝরনা আর বন ছিল তাদের খুবই প্রিয়।

এমন সময়ে গ্রামে এলো রাজার সৈন্যরা। তারা গ্রামে গ্রামে ঘুরে তরুণী মেয়েদের ধরে নিয়ে যেত। রাজপ্রাসাদে তাদের বন্দী করে রাখা হতো কাজের জন্য।

কন্যা, জায়া, জননী- যেই হোক, রাজার সৈন্যদের পছন্দ হলেই তাকে ধরে নিয়ে যেত রাজপ্রাসাদে। তাকে বাধ্য করা হতো বাদী হিসেবে কাজ করতে। স্বেচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক তাদের যেতেই হতো।

তখন ছিল চাষের সময়। জুমিয়া আর তার বউ জুমখেতে গেছে কাজ করতে। এই সময়ে তারা অনেক দিন খেতেই থেকে যেত।

কাজ শেষ করে তবে তারা বাড়ি ফিরত। যাওয়ার আগে জুমিয়া মেয়েদের বলল, আমরা যখন থাকব না তখন ঘরের ভিতর থেকো। কোনো রাজ-কর্মচারী গ্রামে এলে তাদের সামনে যেয়ো না।

এই বলে জুমিয়া আর তার বউ চলে গেল জুমখেতে। একদিন গ্রামে এলো রাজার সৈন্যরা। এ খবর পেয়ে ভয়ে দুই বোন ঘরের এক কোণে চলে গেল। সেখানে চুপচাপ বসে থাকল।

রাজার সৈন্যরা যখন তাদের ঘরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল তখন বড় বোন বলল, দেখ, ঐতো রাজার সৈন্যরা যাচ্ছে, চুপচাপ বসে থাক।

ওরা দেখে ফেললে আমাদের ধরে নিয়ে যেতে পারে। ছোট বোন বড়কে কথা বলতে নিষেধ করল। কথা বললে রাজার  সৈন্যরা তাদের দেখে ফেলতে পারে।

রাজাসৈন্যরা ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। ঘরের ভিতরে দুই বোনের ফিসফিসানির শব্দ শুনতে পেল। তারা ঘরের ভিতর গেল। সেখানে দেখতে পেল দুই বোন লুকিয়ে আছে।

দুই বোনকে দেখে তাদের খুব ভালো লাগল । রাজসৈন্যরা দুই বোনকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।

কিছুদিন পর জুমখেতের কাজ শেষে জুমিয়া আর ওর বউ বাড়িতে ফিরে এলো। কিন্তু বাড়ির কোথাও তারা মেয়ে দুটিকে দেখতে পেল না । প্রতিবেশীরা জানাল, রাজসৈন্যরা তার মেয়েদের রাজপ্রাসাদে নিয়ে গেছে।

কিন্তু অসহায় জুমিয়া একথা শুনে কিছুই করতে পারল না। দুইজনে কেঁদে কেটে শুধু মেয়েদের কথা স্মরণ করল।

দুই বোন রাজপ্রাসাদে ভালো ছিল না। রাজপ্রাসাদের জৌলুশ তাদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। তারা সব সময় গ্রামের সাদামাটা জীবনের কথা মনে করে দুঃখ করত।

তারা দুইজন সারাদিন কাঁদত। রাজপ্রাসাদের খাবার তাদের ভালো লাগত না। কাঁদতে কাঁদতে কিছুদিন পর দুই বোন মারা গেল।

পরের জন্মে দুই বোন পাখি হয়ে জন্মাল। তাদের তখন আগের জন্মের সব ঘটনা মনে পড়ল। তারা ঘরের মধ্যে নীরব থাকতে পারেনি বলে রাজার সৈন্যরা বুঝতে পেরে তাদের ধরে নিয়ে গেল। তারা যদি ফিসফিস করে কথা না বলত তবে তাদের রাজপ্রাসাদে যেতে হতো না।

তাই এই পাখিরা যখন ওড়ে তখন সবাই অদ্ভুত স্বরে ডাকে। একজন আরেকজনকে ডেকে বলে, কোক-তা-সাদি। এর-অর্থ হল কথা বোললা না।

প্রসঙ্গ:কথা বোলো না, ত্রিপুরা, ত্রিপুরা লোককাহিনী, লোককাহিনী

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা

ত্রিপুরা লোককাহিনী: কথা বোলো না