আদিবাসী বর্মণ মুক্তিযোদ্ধা

Jumjournal
Last updated Dec 6th, 2020

573

featured image

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বর্মণ জাতির আদিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে এই লেখাটিতে।

মেঘলাল বর্মণ

মেঘলাল বর্মণ ১৯৪৪ সালে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার বার্ডপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা প্রয়াত মাধুরাম বর্মণ, মা শ্রীমতী বেচরানী বর্মণ। দুই ভাই ছিলেন তারা।

সামান্য পড়াশোনা করা মেঘলাল ১৯৭১ সালে সন্তোষ নামক এক ক্যানভাচারের সাথে হাটে-বাজারে ঔষধ বিক্রি করতেন। গানবাজনা ছিল তাঁর পেশা। তিনি হারমোনিয়াম ও বাঁশী বাজাতে ওস্তাদ ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর তিনি কাদেরীয়া বাহিনীতে যোগদান করেন এবং সখীপুরে স্থানীয়ভাবে অস্ত্র প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন। অতঃপর ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে যুদ্ধ করেন।

মির্জাপুর আড়াইপাড়া প্রভৃতি স্থানে সফল যুদ্ধ করেন মেঘলাল বর্মণ। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৩ অক্টোবর মির্জাপুর থানার পাথরঘাটা নামক স্থানে কমান্ডার কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাক-সেনাদের সাথে সম্মুখযুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় শত্রু-সেনাদের ব্রাশ ফায়ারে শহীদ হন তিনি। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মেঘলাল বর্মণ অবিবাহিত ছিলেন।

অনিল চন্দ্র বর্মণ

অনিল চন্দ্র বর্মণ আদিবাসী বংশী বর্মণ সম্প্রদায়ের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে তিনি দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন। ২৫ মার্চের পর তিনি এলাকায় রাজাকারদের অত্যাচারে বনে জঙ্গলে ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঘুরতে থাকেন।

এপ্রিল মাসের দিকে মাওনা বারতোপা গ্রামে জনৈক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় পান। এখান থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগদানের উদ্দেশ্যে তিনি পায়ে হেঁটে ভালুকার দিকে চলে যান।

কাচিনা এলাকায় পৌছালে হঠাৎ রাস্তায় তার স্কুলের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়। ঐ সময় মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে অস্ত্রধারী ১০/১২ জন মুক্তিযোদ্ধা ছিল।

তারা তখন পাকবাহিনীর গতিবিধি ও এলাকা পর্যবেক্ষণের জন্য টহল দিচ্ছিল। মোহাম্মদ আলী অনিল চন্দ্র বর্মনের ইচ্ছের কথা জানতে পেরে তাকে সঙ্গে নিয়ে যান।

ভেরামতলী, বদনীভাংগা ইত্যাদি গ্রাম ঘুরে তারা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পৌছেন। ৫/৭ দিন পর তাঁকে কালমেঘা আবু খন্দকারের বাড়িতে স্থাপিত প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়।

১০/১৫ দিন তিনি যুদ্ধের কলাকৌশল ও অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষক ছিলেন ইপিআরের আবুল কাশেম ও কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল হাকিম।

এই সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। বিভিন্ন অপারেশনে তিনি বেশ দক্ষতার পরিচয় দেন। ফুলবাড়িয়া রাজাকার ক্যাম্প তারা যুদ্ধ করে দখল করেন।

মল্লিক বাড়িতে এক যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান শহীদ হন। কালিয়াকৈর বোয়ালী এলাকায় তারা বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন।

বোয়ালী থেকে তারা কালিয়াকৈর সদর এলাকায় বিভিন্ন অপারেশন চালাতেন। এক রাতে তারা লতিফপুরে পাকসেনা ও রাজাকারদের ক্যাম্প আক্রমণ করেন।

একদিন দিনের বেলা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাত্র ১০/১৫ জন মুক্তিযোদ্ধা মৌচাক নুরবাগ স্থানে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। ওই যুদ্ধে পাকসেনাদের একটি জীপ গাড়ি ও কয়েকটি অস্ত্র উদ্ধার হয়।

জীপ গাড়িটি তারা কাঁচিঘাটা নিয়ে আসেন। পরে গাড়িটি বাটাজোড় পাঠানো হয়। নভেম্বর মাসের শেষে রোজার মধ্যে শালদহপাড়া ব্রীজে কোম্পানি কমান্ডার আবদুল হাকিমের নেতৃত্বে পাকসেনাদের সঙ্গে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

এ যুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অসংখ্য পাকসেনা ভারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধারা ছিল মাত্র ৭০/৮০ জন।

এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধে টিকতে না পেরে আত্মরক্ষার্থে পিছু হটে আসেন। এরপর কালিয়াকৈর বাজার দখল করার জন্য কয়েকবার অপারেশন করে ব্যর্থ হন।

ডিসেম্বর মাসের ১১/১২ তারিখে কমান্ডার আবদুল হাকিমের নেতৃত্বে তারা কালিয়াকৈর মুক্ত করেন। সন্ধ্যার দিকে মুক্তিযোদ্ধা দল কালিয়াকৈর বাজারের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান নেন।

পাকসেনা ও রাজাকারদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে ২/৩ দিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি করতে করতে অগ্রসর হলে পাকবাহিনী ভয়ে পালিয়ে যায়। কালিয়াকৈর বাজারে উঠে তারা দেখতে পান রাজাকাররা হিন্দুবাড়ি থেকে বহু জিনিসপত্র লুট করে এনে সিনেমা হলে ভরে রেখেছে।

তারা এসব জিনিসপত্র মালিককে ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করেন। অনিল চন্দ্র বর্মণের সহযোদ্ধা ছিলেন মোহাম্মদ আলী আইএসসি, আঃ সালাম মোল্লা, আবদুর রউফ প্রমুখ।

গ্রুপ কমান্ডার ছিলেন ইপিআরের হাবিলদার সামসুর রহমান। কালিয়াকৈর মুক্ত হওয়ার পর তারা এখানে ৭/৮ দিন অবস্থান করেন। এরপর পায়ে হেঁটে ফুলবাড়িয়া দিয়ে ত্রিশাল হয়ে ময়মনসিংহ শহরে পৌছেন।

সেখানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নিকট অস্ত্র সমর্পণ করে বাড়ি চলে আসেন। যুদ্ধের পর পুনরায় লেখাপড়া শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার পিতা মারা যান।

১৯৭৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর আর লেখাপড়া হয়নি। পেশা হিসেবে পৈতৃক গৃহস্থালীর কাজ শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি ফুটবল খেলতেন।

এক সময় তিনি কজন নামকরা ফুটবল খেলোয়াড়ের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। আর্থিক সংকটে পড়ে বর্তমানে তিনি একটি এনজিওতে ছোটখাটো চাকরি করছেন।

অনিল চন্দ্র বর্মণের বর্তমান বয়স প্রায় ৬০ বছর। তার পিতার নাম মৃত মকুন্দচন্দ্র বর্মণ। মাতা শরাইমনী বর্মণী। ১৯৭৫ সালে তিনি বিয়ে করেন।

স্ত্রী উর্মিলা রানী দীর্ঘদিন থেকে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গু জীবনযাপন করছেন। টাকার অভাবে নিয়মিত ভালো চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

ভিটেবাড়ির সামান্য ৪/৫ শতাংশ জমি ছাড়া আর কোনও জমিজমা নেই। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ভূমিহীন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারিভাবে কিছু জমি বরাদ্দ পেয়েছিলেন।

কিন্তু গত ৭ বছরেও সেই জমির আর কোনও হদিস পাননি। অনিল চন্দ্র বর্মণ ২ কন্যা সন্তানের জনক, বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে অর্চনা রানী ২০০৭ সালে এইচএসসি পাস করেছে। মেয়েটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকতার চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন।

মায়ের চিকিৎসার জন্য অর্চনা রানীর একটি চাকরি খুবই প্রয়োজন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখলে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার সংসারের দায় থেকে বেঁচে যাবে।

গোষ্ঠনাথ বর্মণ

আদিবাসী বর্মণ সম্প্রদায়ের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা গোষ্ঠনাথ বর্মণ। ১৬ বছর বয়সে ছাত্রাবস্থায় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

২৫ মার্চের পর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তিনি ৩০ এপ্রিল পার্শ্ববর্তী কালিহাতী থানার মরিচা এলাকায় কাদেরিয়া বাহিনীতে যোগ দেন।

এরপর তিনি ভারতের তোরা পাহাড় ক্যাম্পে প্রশিক্ষক হেলালের কাছে ৩০ দিন অস্ত্র চালনা প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে নবী নেওয়াজের নেতৃত্বে তিনি বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন।

তার সহযোদ্ধা ছিলেন আবুল কালাম আজাদ বাদল, তপন কুমার, স্বপন কুমার প্রমুখ। যুদ্ধ শেষে তিনি পুনরায় লেখাপড়া শুরু করেন।

মুক্তিযোদ্ধা গোষ্ঠনাথ বর্মণ ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা লোকনাথ বর্মণ, তার স্থায়ী নিবাস গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার কেন্দুয়ার বাইদ গ্রামে।

তিনি বিএ পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। পেশা হিসেবে পৈতৃক কৃষি কাজ দেখাশোনা করতেন। ২০০১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী বিমলা রানীসহ ২ পুত্র, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ বিভাগে কর্মরত। ১ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ২ মেয়ে কলেজ ছাত্রী।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বিভিন্ন তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম থাকলেও জোট সরকারের আমলে প্রণীত সরকারি গেজেটে তার নাম ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাদ দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার পরিবার আজ পর্যন্ত কোন সুযোগ সুবিধা পায়নি।

বিমান বিহারী বর্মণ

আদিবাসী বর্মণ সম্প্রদায়ের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমান বিহারী বর্মণ। ১৯৭১ সালে তিনি ফুলবাড়িয়া আক্কেল আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন।

তিনি পূর্ব থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ২৫ মার্চের পর তাদের পরিবার নিজ বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের। আশায় কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ও জয়দেবপুর এই তিন থানার সংযোগ এলাকায় যাযাবরের মতো বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের বাড়িতে বাস করতে থাকে।

তিনি নিজে পরিচিত বন্ধু-বান্ধব ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিভিন্নভাবে অংশ নেয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন।

তখন তার পিতার পূর্বপরিচিত বরিয়াবহ গ্রামের সৈয়দ আনোয়ারুল হক ভারত থেকে। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফুলবাড়িয়া মাওনা এলাকায় কয়েকবার যাতায়াত করেন।

আনোয়ারুল হক বিমান বিহারীর পিতার সঙ্গে প্রতিবারই দেখা করতেন। আর বিমান বিহারীকে বলতেন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চাইলে ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য প্রস্তুতি নেন।

সুযোগ খুঁজতে থাকেন ভারত গমনের। এই সময় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংসদ শামসুল হকের পরিবারকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য লোক আসে।

ওই পরিবারের সঙ্গে প্রায় ৫০ জনর দল পায়ে হেঁটে ও নৌকাযোগে সীমান্তের কাছে আসেন। অনেক কষ্টে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে আগরতলা হাপানিয়া শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেন।

হাপানিয়া শরণার্থী ক্যাম্পের তখন দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন কালিয়াকৈর-শ্রীপুর এলাকার এমপিএ ছফিরউদ্দিন আহমেদ। এখানে ২ দিন থাকার পর ইছামতী শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় পান। ইছামতী ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন সাভার ও ধামরাই এলাকার এমপিএ জালাল উদ্দিন।

ইছামতী ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করতেন তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতা দেওয়ান মোঃ ইব্রাহিম। অক্টোবর মাসের দিকে ভারতের কালী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনের ভর বিশ্ব ভ্রমণ শুরু করেন।

তখন তারা গোপনে আভাস পান মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তড়িঘড়ি করে তারা দেওয়ান মোঃ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে কালিয়াকৈর, শ্রীপুর ও জয়দেবপুর থানার ১৫-২০ জনের দল মেজর শফিউল্লাহর হেডকোয়ার্টারে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে ১৫ ডনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আখাউড়া বর্ডার দিয়ে পায়ে হেঁটে অস্ত্র, গোলাবারুদসহ কাপাসিয়ায় তাজউদ্দিনের গ্রামে আসেন। সেখানে দেখেন তাজউদ্দিনের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সেখান থেকে পায়ে হেঁটে ভাওয়াল মির্জাপুর আসেন। কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, জয়দেবপুর এলাকায় বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। কালিয়াকৈর এলাকায় যুদ্ধের শুরুতেই আফসার ব্যাটালিয়নের কমান্ডার আঃ হাকিম দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেন।

বিজয়ের প্রাককালে ভারতে প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে হাকিম গ্রুপের ভুল বোঝাবুঝি হয়। বিমান বিহারীর প্রচেষ্টায় সেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমান বিহারী বর্মণের জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৪৬ সালে। তার পিতা মৃত বিরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ, মাতা পলাশী বর্মণ। গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের সিরাজপুর গ্রামে।

বর্তমানে তিনি গাজীপুর সদরের সি-২২ দক্ষিণ ছায়াবীথি এলাকার বাড়িতে বসবাস করছেন। তিনি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন।

পেশা হিসেবে ঠিকাদারী ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এখন অবসর নিয়েছেন। বিমান বিহারী বর্মণ ১৯৭৪ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

স্ত্রী মায়ারানী একজন সুগৃহিণী। তারা তিন পুত্র সন্তানের জনক-জননী। বড় ছেলে ইটালী প্রবাসী, মেজো ছেলে ব্যবসায়ী, ছোট ছেলে কলেজ ছাত্র। বিমান বিহারী বর্মণ আজীবন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

রাজনীতিতে কখনো তিনি সামনে আসেননি। সব সময় পেছনে থেকে বুদ্ধি পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে দল পরিচালনা করেছেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন আদর্শের সৈনিক।

বিধান চন্দ্র বর্মণ

বিধান চন্দ্র বর্মণ আদিবাসী বর্মণ সম্প্রদায়ের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

১৯৭১ গলে তিনি কলেজের ছাত্র ছিলেন। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পর এলাকার অন্যান্য ছাত্র ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন।

জয়দেবপুর অঞ্চলে বিভিন্ন প্রতিরোধ যুদ্ধে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ২৫ মার্চের পর পাকবাহিনীর ভয়ে তাদের পরিবার নিজ বাড়ি ছেড়ে এলাকার আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের বাড়িতে অবস্থান করতে থাকে।

তিনি নিজে অন্যান্য ছাত্র-যুবকদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করতে থাকেন। এভাবে তিনি আফসার ব্যাটালিয়নের হাকিম গ্রুপের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। হাকিম সাহেবের কাছে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি কালিয়াকৈর এলাকার বিভিন্ন অপারেশনে অংশ নেন। যুদ্ধের পর তিনি পুনরায় লেখাপড়া শুরু করেন।

বিধান চন্দ্র বর্মণ ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা বিরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া। ইউনিয়নের সিরাজপুর গ্রামে। তারা ছিলেন ৫ ভাই ২ বোন।

তিনি স্নাতক পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। দীর্ঘদিন তিনি সিসিডিভিতে চাকরি করেছেন। ১৯৮৪ সালে গ্রামের বাড়ি থেকে ভাওয়াল মির্জাপুর হয়ে জয়দেবপুর শহরে বড় ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা বিমান বিহারী বর্মণের বাসায় আসার সময় সালনার সন্নিকটে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান।

ওই সড়ক দুর্ঘটনায় তার সঙ্গে তার পিতা বিরেন্দ্র চন্দ্র বর্মণ ও বন্ধু বীর মুক্তিযোদ্ধা দীনেশ চন্দ্র বর্মণ মৃত্যুবরণ করেন।

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা