রাখাইন রূপকথা: ভূতের কাহিনী
944
পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এক বাগান। পাশে প্রবাহিত ছোট নদী। নদীর পানি যেন কাকের চোখের মত টলমল করে। নদীর পাড়ে কাশ বনে ডাহুক-পোচা আর মাছরাঙা পাখির বাস।
একটি গ্রাম। গ্রামের পথের ধারে একটি বটগাছ। বটগাছে বাস করত এক ভূত পরিবার।
মা-বাবা কোন এক কাজে বাইরে গিয়েছিল বাড়িতে ছোট ভাইকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে তার বড় বোন।
বটগাছের চার দিকে চারটি দড়ি দিয়ে দোলনায় শ্লোক গেয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে ছোট ভাইকে। ছোট ভাইয়ের ঘুম ধরলো না বলে বোনটি উত্তেজিত হল রাগে ।
বোনটি তার মা-বাবার কাছে ছোট ভাইয়ের সম্পর্কে সংবাদ পাঠাতে চেয়েছিল। এমন সময় বটগাছের নিচে পথ ধরে একজন লোক তার বাড়িতে ফিরছে।
লোকটিকে দেখে বোন বলল, “দাদা-দাদা, আপনিগ্রামে যাচ্ছেন বুঝি”! লোকটি ডাক শুনে চমকে উঠল এবং কিছুক্ষণ চিন্তা করে এদিক-ওদিক তাকাল।
কোন কিছু দেখতে না পেয়ে তার মনে ভয় আসল। ধীর গতিতে লোকটি সামনে এগোতে লাগল। বোন আবার লোকটিকে ডেকে বলল, “তোমাকে আমি ডাকছি”।
লোকটি বলল, “তুমি কে? তুমি কোথায়? তোমাকে দেখা যাচ্ছে না”।
ভূত বলল, “আমি এ বটগাছের উত্তর দিকে ডালে বসে আছি”। লোকেরা আমাদেরকে দেখতে পায় না।
আমাদেরকে দেখতে চাইলে আমার কথা মত করতে হবে। তাহলে আমাকে দেখবে”। লোকটি বলল, “তাহলে আমাকে কি করতে হবে”।
ভূত বলল, “এ বটগাছের পূর্বদিকে প্রসারিত শিকড়টি কুড়িয়ে মুখে দিলে আমাকে দেখতে পাবে”।
লোকটি শিকড়টি কুড়িয়ে পেল না বলে ভূতকে বলল, “আমি ঐ শিকড়টি খুঁজে পেলাম না”।
ভূত গাছ থেকে নেমে পূর্বদিকে প্রসারিত বটগাছের শিকড়টি লোকটির হাতে দিল এবং মুখে দিতে বলল।
লোকটি ঐ শিকড়টিকে মুখে দিলে বটগাছের ভূত পরিবারকে দেখতে পেল। গাছের ডালে দোলনায় উত্তেজিত ছোট ভূতকে দেখল।
লোকটির মনের ভয় ধীরে ধীরে কমে আসল। একটু একটু খুশীও হল।
ভূত বলল লোকটিকে, “দাদা, এ পথ ধরে এশিকড়টি মুখে দিয়ে গ্রামে চলে গেলে আমার মা-বাবাকে দেখবেন। তাদেরকে বলবেন, ছোট ভাইটি ক্রন্দন করছে।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়িতে যেন আসে।”
লোকটি একটু খুশী হলেও গ্রামের পথ বেয়ে একা যেতে হবে, তাই তার মনে ভয় লেগেছে।
ভয় লেগে থাকলেও হাঁটি হাঁটি পা-পা করে পথ এগােতে লাগল এবং দেখতে পেল,এক দল ভূত মৃত মানুষের মাংস বন্টন করে চলেছে।
লোকেরা যেমন গরু কিংবা শূকরের মাংস ভাগ করে খায়, তেমনি মানুষের লাশ পেলে ভূতরা খাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়।
কারো হাতে দা, কারো হাতে ঝুড়ি, কারো হাতে ছোট দা এবং কারো কোমরে গামছা বাধা, কারো মাথায় পাগড়ি, কেউবা লুঙ্গি কিংবা নেংটি পড়া।
এসব দৃশ্য দেখে লোকটি ভয় পেয়ে চমকে উঠল এবং বলল, “এখানে কি হয়েছে? কেন এ আয়োজন”?,
ভূতের দল লোকটিকে দেখতে পেল। তারা ভাবল, লোকেরা আমাদেরকে দেখতে শিখেছে।
লোকেরা আমাদের দেখা পাবে। ভূতের দল পরিকল্পনা করে লোকটিকে অতর্কিতে হামলা করল।
লোকটি ভূতের হামলার শিকার হয়ে আঘাত পেল এবং মুখ থেকে বটের শিকড়টি পড়ে গেল।
শিকড়টি মুখ থেকে পড়ে গেলে একটি কুকুর ঘটনাস্থলে ছুটে আসল এবং একটি কাক উড়ে এসে পাশে একটি গাছে বসল।
কুকুর বটের শিকড়টি কি যেন মনে করে মুখে নিয়ে কামড় দিলে গাছের ডাল থেকে নেমে কাক কুকুরের কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইল।
শিকড়ের আবণাংশ কাক মুখে নিয়ে গেল। লোকটির মুখে শিকড় না থাকায় ভূতকে আর দেখতে পেল।
কিন্তু কুকুর ও কাক ঐ বটের শিকড়টি মুখে নিতে সক্ষম হয়েছে বলে তারা ভূতকে দেখার শক্তি পেল। সেদিন থেকে লোকেরা ভূতকে দেখতে পায় না।
লেখক: উ খ্যাই রাখাইন
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।