মারমা রূপকথাঃ বিপদের রাজা
1787

অনেক অনেক দিনের আগের কথা। সে সময় এক রাজা বাস করতেন। রাজা খুবই দয়ালু ছিলেন।
একদিন দুপুর বেলায় রাজা উঠানের মধ্যে চেয়ার পেতে বসে আছেন। এমন সময় দেখতে পেলেন তাঁর দিকে একটা মস্ত বড় সাপ দ্রুতবেগে ছুটে আসছে।
আর তার পিছে পিছে উড়ে আসছে একটা শঙ্খচিল। সাপটা রাজার কাছে এসে প্রার্থনা করলো – মহারাজ, আমাকে বাঁচান। ঐ রাক্ষস চিলটা আমাকে নাগাল পেলে এক্ষুনি গিলে ফেলবে, আমাকে বাঁচান।
তখন রাজা বললেন ঠিক আছে, ভয়ের কোন কারণ নেই, তুমি আমার চেয়ারের নীচে লুকিয়ে থাক। কিন্তু চেয়ারের নীচে লুকিয়ে থাকতে তার ভরসা না হলে সাপটা আবার বললো – মহারাজ, সেখানে থাকলে ছোঁ মেরে নিয়ে যেতে তার আরো সহজ হবে।
তারপর রাজা বললেন, তাহলে আমি তোমাকে কোথায় রাখব? তখন সাপটা বললো মহারাজ কিছুক্ষনের জন্য আমাকে আপনার পেটের ভিতর আশ্রয় দিন।
চিলটা চলে গেলে আমি আবার বেরিয়ে আসব। রাজা সাপের দুরাবস্থা দেখে বললেন – ঠিক আছে তাই করো। এই বলে রাজ মুখটা হা করে দিলে সাপটা নিরাপদে রাজার পেটের মধ্যে ঢুকে গেল।
পরক্ষণে চিলটা সাপটাকে অনুসরণ করে এসে দেখে সাপটা নেই। তারপর ব্যর্থ হয়ে চিলটা আবার তার নির্দিষ্ট স্থানে চলে যায়।
চিলটা চলে যাওয়ার পর রাজা সাপের অপেক্ষা করতে লাগলেন, কখন সে বেড়িয়ে আসবে। এইভাবে দিনের পর দিন মাসের পর মাস বছরের পর বছর অপেক্ষা করার পরও সাপটা বেরিয়ে আসলো না।
রাজা মহা চিন্তায় পড়ে গেলেন। চিন্তায় চিন্তায় রাজার হাতে উঠছে না রাজকার্য, কথা বলছেনা কারোর সাথে। এমনকি রাণীর সাথেও। কিন্তু কেউ জানেনা রাজার দুরাবস্থার কথা।
একদিন রাজা বারান্দায় বসে দেয়ালে হাত তুলে চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। এরিমধ্যে পিঁপড়েরা দেয়ালের উপর দিয়ে দল বেধেঁ চলে যাচ্ছে।
কিন্তু রাজার হাতটা সেখানে থাকায় পিঁপড়েদের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। দলের সামনের পিঁপড়ে বললে এই লোকটা আমাদের চলার পথটাকে কেন বন্ধ করে দিয়েছে? আরো এক পিঁপড়ে বলে উঠলো – হাতটা ধাক্কা দিয়ে চলে যাও।
পিঁপড়েদের কথা শুনে রাজা একটু মলিন হাঁসি দিলেন। ঠিক এরি মধ্যে উঠান দিয়ে একজন কাজের মেয়ে চলে যাচ্ছে। রাণী রাজার হাঁসিটা দেখে ফেললেন।
এবার রাণী মনে মনে বললেন – এতদিন কারো সাথে কোনো কথা বলছেনা। আজ কেন ঐ মেয়েটা দেখে হাঁসছে। তারপর সঙ্গে সঙ্গে রাণী, রাজাকে রাজ্য ছেড়ে চলে যাএয়ার জন্য নির্দেশ দিলেন।
রাজা রাজ্য ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলেন। একদিন রাজা ঘুরতে ঘুরতে অন্য এক রাজার রাজ্যের মধ্যে পৌঁছে গেলেন। সেখানে একটা বিরাট বটবৃক্ষ ছিল। রাজা ক্লান্ত হয়ে ঐ বৃক্ষের নীচে ঘুমিয়ে পড়লেন।
ঠিক সেই মুহুর্তে সেই রাজ্যের রাজার সাত মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় রাজাকে নাগাল পেয়ে বড় মেয়ে বলে উঠলো – এই লোকটা আমাদের চলার পথে কেন এমনিভাবে আছে। এই বলে তাঁকে লাফিয়ে চলে গেলো।
মেঝ মেয়েও এভাবে চলে গেলো। পর পর সবাই যেতে যেতে সবার ছোট্ট মেয়েটা না গিয়ে রাজাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে জিজ্ঞাস করলো – কী তাঁর পরিচয়? কি হয়েছে? কেন এমন হয়েছে?
রাজা তখন সমস্ত কথা খুলে বললেন। রাজার দুঃখের কথা শুনে মেয়েটি সেদিন থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে রাজাকে সেবা শুশ্রূষা করতে লাগলো।
পরে তার পিতা এই কথা শুনে মেয়েটিকে বাঁধা দিলেন, কিন্তু মেয়েটি বাবার বাঁধা না শুনে এক নাগারে সেবা করে যেতে লাগলো।
একদিন গভীর রাত্রে বট বৃক্ষ থেকে একটা গাছ ব্যাঙ ডাক দিচ্ছে। এমন সময় রাজার পেটের ভিতর থেকে সাপটা অর্ধেক বেরিয়ে বলতে শুরু করলো – শালার ব্যাঙ, আরে কিছুদিন থাক, রাজার পেট থেকে বেরিয়ে তোকে গিলে না খেলে চিনবেনা।
সাপের কথা শুনে ব্যাঙটা আবার ঠাট্টা করে বলতে শুরু করল – আরে বেয়াদব, বেআক্কেল, অকৃতজ্ঞ।
রাজা তোমাকে চিলের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে রেখেছিলেন, চিলটা চলে গেলে বেড়িয়ে আসবে বলে কথা দিয়েছিলে।
শালার অকৃতজ্ঞ। রাজা ওষুধ খেলে তারপর বুঝবে, তোমার কি যে অবস্থা হয়। বলে রাখছি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে না আসলে রাজার একেবারে পায়খানা হয়ে যাবি।
তারা দু’জনে কথা বলাবলি করার সময় ঐ ময়েটি তখনো ঘুমিয়ে পড়েনি। যার জন্য তারা কি বলাবলি করলো, মেয়েটি সব শুনে ফেলেছে।
পরদিন সকাল হওয়ার সাথে সাথে মেয়েটি ব্যাঙের বলে দেওয়া ঔষধটি খোঁজার জন্য বেড়িয়ে পরলো।
এমনিভাবে খুঁজতে খুঁজতে শেষে এক বুড়ির নিকট সন্ধান পেলো এবং সঙ্গে সঙ্গে এনে রাজাকে খাওয়ালো এবং রাজাও তাড়তাড়ি সুস্থ হয়ে উঠলেন।
তারপর রাজা মেয়েটিকে সঙ্গে নিয়ে নিজের রাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেলেন এবং তার নিজ রাজ্যের মধ্যে পৌঁছে তাঁর রাণীকে ফাঁসি দিয়ে ঐ মেয়েটির সাথে সুখের সংসার শুরু করেন।
King of danger by Tripta Chakmaলেখকঃ মাসিঞো মারমা (সপ্তম শ্রেণী)
জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।