Jumjournal Logo

Search

Menu

ত্রিপুরা রূপকথাঃ এক ভোলা জামাই

Jumjournal

Last updated Sep 1st, 2021

1386

featured image

একদিন এক ভোলা, বিয়ে করে স্ত্রীকে বাপের বাড়ী নিয়ে আসলো। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ হতে না হতেই তার স্ত্রী একা বাপের বাড়ী বেড়াতে গেলো।

একদিন ভোলার মা জিজ্ঞাসা করলো তোমার বৌ বেড়াতে গেছে বাপের বাড়ী, তুমি যাবে? একথা বলার পর তাড়াতাড়ি ভোলা মাকে বললো – আচ্ছা মা, শ্বশুর বাড়ীতে বেড়াতে গেলে কি কি নিয়ে যেতে হয়?

তার মা বললো – বাজারে যা কিছু আছে তা নিয়ে যা। তাই সে একদিন বাজারে গিয়ে দোকানদারকে বললো কিছু মিছু আছে ভাই? দোকানদার আশ্চর্য হয়ে কয়েকবার বললো কী কিছু মিছু, আমি চিনি না।

এভাবে বেশ কয়েকজন দোকানদার থেকে জিজ্ঞেস করলো কিন্তু বেচেরা কোথাও খুঁজে পেলোনা। তাই ক্ষুদ্ধ হয়ে বাজার থেকে ফিরে, পথে এক বট গাছের ছায়ার নীচে বসে চিন্তা করতে লাগলো, এই কিছু মিছু কোথায় পাওয়া যেতে পারে।

কিছুক্ষণ পর সেই পথ দিয়ে এক বৃদ্ধ লোক মান কচু নিয়ে বাজারে যাচ্ছে। ভোলা জিজ্ঞেস করলো কচুটা বিক্রয় করা হবে কি না। বৃদ্ধ বলে দিলো বিক্রির জন্যইতো নিয়ে যাচ্ছি।

তাহলে দাম কত? – বিশ টাকা। ভোলা বিশ টাকা দিয়ে বলে চৌদ্দ টাকা চার আনা রেখে বাকী টাকা ফেরত দেওয়ার জন্যই।

– কেন? আমিতো আরো পাবো। ভোলা বললো মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? আমি যেটা বলছি, সেটা করো। বৃদ্ধ বাধ্য হয়ে টাকাগুলো ফেরত দিলো।

এবার ভোলা খুশী হয়ে কচুটা কাঁধে করে নৃত্যের তালে তালে শ্বশুর বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হলো এবং দূর থেকে তার শ্যালক শ্যালিকারা বোনের জামাই আসছে দেখে মহাখুশী হয়ে তারাও হৈ চৈ শুরু করে দিলো।

দুলাভাই আসছে, দুলাভাই আসছে। এরই মধ্যে তার শ্বশুর নতুন জামাই এসেছে দেখে খুব খুশী হয়ে বাজার করার জন্যে বাজারে চলে গেলো এবং কিছুক্ষণ পর নানা তরকারী নিয়ে এসে তার স্ত্রীকে বললো, ভালোভাবে তরকারীগুলো রান্না করো গিন্নি।

যদি স্বাদ না হয় তাহলে জামাই বাবু বাড়ীতে গিয়ে বদনাম করবে, আমাদের মেয়েকে বকবে।

অপরদিকে জামাই বাবু ভোলার পায়খানা আসা শুরু করে দিলে। ভোলা তার শালাশালিদের থেকে মুখ বাঁকা চাঁকা করে জিজ্ঞেস করলো তাদের পায়খানার ঘরটা কোনদিকে।

দুলাভাইয়ের অবস্থা দেখে তারা বললো, আমাদেরতো তেমন পায়খানা ঘর নেই, কবে নদীর পাড়ে একটা বাঁকা গাছ পরে আছে, সেখানেই আমরা পায়খানা করতাম। এখন তোমার ইচ্ছা করলে সেখানে পায়খানা করতে পারো।

ভোলা আর কোন কথা জিজ্ঞেস না করে সোজা সেখানে গিয়ে পায়খানা করে দিলো।

ভোলা পায়খানা করতে করতে হঠাৎ মুখটা পিছন ফিরে দেখে তার পায়খানাটা নড়াচড়া করছে। বিস্মিত হলো কেমন করে তার পায়খানাটা নড়াচড়া করছে।

ভোলা জানেনা যে সেখানে একটা কচ্ছপ আছে এবং ঐ কচ্ছপের পিঠে পায়খানা পড়ে নড়া চড়া করে নদীর মধ্যে চলে গেল।

এভাবে পায়খানা চলে যেতে দেখে ভোলা বললো বাহ্ আমার পায়খানাটাতো হাঁটতে পারে। তাই সে মনে মনে একটু গর্ববোধ করলো এবার থেকে বাড়ীতে বসে বসে পায়খানা করতে পারবো বলে।

ভোলার কচু ক্রয়, আর্টঃ তৃপ্তা চাকমা

একদিন ভোলা রাত্রে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লো। ভোর রাতে তার শাশুরী তার বড় মেয়ে ও ছোট মেয়েকে ঘুম থেকে তোলে জামাই বাবুর জন্য পিঠা তৈরী করতে রান্না ঘরে গেলো।

তাদের হৈ চৈ শুনে জামাই বাবুর ঘুম ভেঙ্গে গেলো, সাথে প্রকৃতির ডাক এবং সাথে সাথে তার আগের ঘটনাটি মনে পড়লো।

সে ঘরের ভিতরেই পায়খানা করে দিলো। পায়খানা করা শেষ হলে একটা চেরাক (বাতি) নিয়ে দেখলো পায়খানাটা গেলো কিনা।

কিন্তু না পায়খানাটা কোথাও যায়নি। তারপর ভোলা ডাক দিয়ে বললো এই পায়খানা যাওনা, ঐ দিনতো চলে গেছো, আজ কেন যাচ্ছনা?

দেখছ না আজকে আমি ঘরের ভিতরে পায়খানা করে দিয়েছি? না, পায়খানাটা তবুও অনড়। তারপর একটা বেত নিয়ে এসে আবার বললো – এই পায়খানা চলে যাওনা, আমি কিন্তু বেশী বলতে পারবো না।

আর বেশী বললে মাত্র তিনবার বলবো। তখন কিন্তু না গেলে ভীষণ অসুবিধায় পড়ে যাবে। শুন – এক বলছি, দু – ই  বলছি। এ – এ তিন – ইন বলছি।

কিন্তু না, তবুও পায়খানা কোথাও নড়া চড়া করেনি। ভোলা এবার পায়খানাটাকে বেত মারতে মারতে সারা ঘরে, বিছানায় তার পায়খানা ছিটিয়ে ফেললে লজ্জায় সকাল হতে না হতেই শ্বশুর বাড়ী হতে ভোলা জামাই পালিয়ে যেতে বাধ্য হলো।


লেখকঃ যগেশ্বর ত্রিপুরা (দশম শ্রেণী), মোনঘর উচ্চ বিদ্যালয়।

প্রসঙ্গ:ত্রিপুরা রূপকথা, রূপকথা

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা

ত্রিপুরা রূপকথাঃ এক ভোলা জামাই