ত্রিপুরা লোককাহিনীঃ ধনেশপাখি

Jumjournal
Last updated Mar 26th, 2020

915

featured image

একটি ছোট্ট গ্রাম। এ গ্রামে বাস করত এক জুমিয়া। তার নাম কাচক রায়।

তার বউ সমপরি। সে খুবই সুন্দরী আর খুব গুণী। সংসারের সব কাজ নিপুণ হাতে একাই করে। তাকে কাজে সাহায্য করার মতো কেউ নেই।

সমপরি সারাদিন জুমখেতে কাজ করে। তারপর বাড়ির সব কাজ সে একাই সামলায়। আর কাচক খুব অলস। সারা দিন বসে বসে শুধু হাড়িয়া খায়।

তার মেজাজও খুব খিটখিটে। তার বউ খেতেও কাজ করে, আবার গৃহস্থালি কাজও সব একাই করে। তবুও কাচক সামান্য অজুহাতে বউকে বকাঝকা করে।

তা সত্ত্বেও সমপরি খুব ভালোবাসে কাচককে।

কয়েক বছর পর সমপরির একটি ফুটফুটে মেয়ে হল। সমপরি মেয়েটিকে খুব আদর করে। ঘর-সংসারের কাজের পাশাপাশি মেয়েকে খুব যত্ন করে।

সে বছর জুমচাষের সময় এলে সমপরি কাচককে বলল, চাষের কয়েকটা দিন তুমি ঘরে বসে মেয়ের যত্ন নাও। আমি চাষের কাজে যাই।

এভাবেই তাদের দিন কাটছিল। একদিন খুব সকালে সমপরি জুমখেতে যাচ্ছিল। সে সময় একটি কালো বিড়াল তার সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেল।

যাত্রাপথে কালো বিড়াল দেখলে যাত্রা শুভ হয় না।

সে মনে করল, যাওয়ার পথে এটা ছিল অশুভ সংকেত। তাই সে অস্থির হয়ে উঠল।

জুমখেতে যাওয়ার আগে কাচককে বারবার বলে গেল, মেয়েকে ভালো করে দেখে রেখো আর সতর্ক থেকো। আমি ওকে নিয়ে চিন্তায় থাকব।

সমপরি জুমখেতে চলে গেল। কাচক দাওয়ায় বসে বাঁশি বাজাতে লাগল আপন মনে। বাঁশি বাজাতে বাজাতে সে বিমোহিত হয়ে গেল।

কাচক বাঁশি নিয়ে এত মগ্ন ছিল যে কিছু সময়ের জন্য মেয়ের কথাও ভুলে গেল।

তাদের দুটি ছিল বনে ঘেরা। অনেক হিংস্র প্রাণী ঘুরে বেড়াত ঘরের চারপাশে। সেদিন ঘরের সামনে ঝোপের মধ্যে বসেছিল একটি ভাল্লুক।

আর সমপরির মেয়ে ঘরের ভিতর একা বসে খেলছিল। ভাল্লুক দেখতে পেল, একটি মেয়ে ঘরের ভিতর একা বসে খেলছে।

আশপাশে আর কেউ নেই।ভাল্লুকটি ঘরের ভিতর ঢুকে মেয়েটিকে নিয়ে চলে গেল।

কাচক এত মগ্নভাবে বাশি বাজাচ্ছিল যে, ভালুক ঘরের ভিতর ঢুকে মেয়েটিকে নিয়ে চলে গেল। কিন্তু কাচক কিছুই টের পেল না।

সমপরি জুমখেতে কাজ শেষ করে সন্ধ্যায় ফিরে এলো। বাড়িতে এসেই মেয়েকে দেখার জন্য ঘরে ঢুকল। ঘরের ভিতর তন্ন তন্ন করে খুঁজল ।

কিন্তু মেয়েকে কোথাও খুঁজে পেল না। সে কাচককে জিজ্ঞেস করল, মেয়ে কোথায়?

একথা শুনে কাচক যেন আকাশ থেকে পড়ল। মেয়ে কোথায় সে সম্পর্কে কাচক কিছুই বলতে পারল না।

ঘরের ভিতর-বাহির চারদিকে খুঁজে কোথাও মেয়েকে পেল না। এ ঘটনায় সে হতভম্ব! সমপরি কাঁদতে শুরু করল।

মেয়ের প্রতি দায়িত্ব পালনে অবহেলার জন্য কাচককে গালমন্দও করল। মেয়ে হারানোর শোকে সে পাগলপারা।

সে কাচককে এই বলে অভিশাপ দিল, ‘আগামী জন্মে তুমি পাখি হয়ে জন্মাবে। তোমার ঠোট হবে। বাঁশির মতো লম্বা।

তোমার স্বর হবে কর্কশ। প্রজনন মৌসুমে তোমার স্ত্রী পাখি বাসা ছেড়ে এক মুহূর্তের জন্যও কোথাও যাবে না।

বাসায় বসে শুধু ডিম তা দেবে আর বাচ্চা দেখাশোনা করবে, যত দিন না ওরা উড়তে শিখবে। এ সময়ে প্রতিদিন তুমি মা পাখির জন্য খাবার যোগাড় করবে।

এসব কাজ তোমাকে একাই করতে হবে। তোমাকে সাহায্য করারও কেউ থাকবে না।’
এসব কথা বলে সমপরি গৃহত্যাগ করল।

সে চলে গেল বনের ভিতর। আর কখনো সে ফিরে এলো না।

সেই থেকে ধনেশপাখির ঠোট লম্বা, স্বর কর্কশ। স্ত্রী ধনেশ ডিম পাড়ে, ডিম ফুটে বাচ্চা হওয়া পর্যন্ত ডিমের উপর বসে থাকে।

পুরুষ ধনেশ খাবার যোগাড়ের জন্য সারাদিন ব্যস্ত থাকে, যত দিন না ছোট পাখিরা উড়তে শেখে।

লেখক : আবু রেজা

তথ্যসূত্র : ত্রিপুরা আদিবাসী লোককাহিনী

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা