গারো উপকথা: মাৎছা-দু-মাৎছা-বেৎ

Jumjournal
Last updated Apr 30th, 2020

803

featured image

সে অ-নে-ক দিন আগের কথা, মানুষ বসতি থেকে অনেক দুরে, গভীর জঙ্গলে মাৎছা-দু মাৎছা-বেৎ বসতি স্থাপন করেছিল।

এরা দিনে মানুষের রূপ ধারণ করে গ্রামে আসত আর হাসি-ঠাট্টা-গল্প-গানে মানুষকে ভুলিয়ে রাতে বাঘ হয়ে তারই গরু ছাগল, হাস মুরগী ধরে মহাভোঁজ লাগাতো।

এমন কি কোন কোন সময়ে সুযোগ বুঝে মানুষকেও ধরে নিয়ে যেত, খাঁচা বানিয়ে তাদের মাচাং ঘরের দুলায় গরু ছাগলের মত পুষত আর প্রয়োজন এত ধরে ধরে খেত।

এইসব কারণে গ্রামের লোকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল। কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে লাগল। অনেক চিন্তা ভাবনার পর আবেৎ নামে এক লোক এর প্রতিকারের উপায় বের করল।

একদিন সে তার “খক” (পাহাড়ী ঝুড়ি) পাকা কলা দিয়ে ভর্তি করে মাৎছা-দু- মাৎছা বেৎদের এমের দিকে রওনা হল। তাকে দেখতে পেয়ে ভীর জমাল।

“আবেৎ কি এনেছ? তোমার ঝুড়িতে কি আছে দেখাওনা?”

বলতে বলতে কয়েকজনে তার মাথা থেকে বুড়িটা নামিয়েই ফেলল।

“তোমরা কি গাছের ফল খেয়ে দেখবে?”

দেখতে তো বেশ সুন্দর লাগছে, গন্ধও বেশ মিষ্টি বলে মনে হচ্ছে, তা দিলে খেয়ে দেখতে পারি।”

“খেয়ে দেখ কেমন লাগে।”

গ্রামের ছেলে-বুড়ো প্রত্যেকের জন্য আবেৎ একটা করে কল দিল, খেয়ে সবাই খুশী। “আবেৎ, তোমাদের গ্রামে এই ফল অনেক আছে? এটা গাছ না লতা কিসে ধরে।”

 “এটা বিরাট এক গাছের ফল, তোমরা যদি চাও তবে এই গাছের সব ফল আমি তোমাদের খাওয়াতে পারি।

কথা হল আমি একা তো পারবনা, তোমাদের সাহায্যের প্রয়োজন আছে।

আমি গাছের গুড়িটা কেটে দেব তোমরা সকলে মিলে গাছটা খাড়া করে ধরে রাখবে যেন গাছ মাটিতে পড়ে ফল নষ্ট না হয়।”

“তুমি গুড়ি কেটে দিলে আমরা সবাই মিলে গাছটা ধরে রাখতে পারব। আহা, ফল তো নয় যেন মধু, স্বাদ এখনও জিভে লেগে আছে।”

অবৎ এর গ্রামে বিশ হাত মোটা গুড়ি বিশিষ্ট বিরাট এক, শিমুল তুলার গাছ ছিল। সেই গাছে অসংখ্য ফল ধরেছিল। অবেং মাৎছা-দু-মাৎছা-বেৎদের সেই গাছের কাছে নিয়ে এলো।

“ঐ দেখ কত কলা, গাছটা কেটে দিই, মনে। খুশীতে প্রাণ ভরে খেও।”

সবাই আনন্দে চিৎকার করে উঠল। সাত দিন পর আবৎ গাছের গুড়ি কাটল। শেষ দিনে সে তাদের বলল:

“এখন গাছটা দিকে পড়বে। তোমরা সবাই মিলে হাত উচু করে গাছটাকে ঠেকিয়ে রাখবে। সাবধান একটা কলাও যেন নষ্ট হয়না।”

ছেলে-বুড়ো, মেয়ে-পুরুষ সব মাৎছা দু-মাৎছা-বেৎ কলার লোভে হাত উচু করে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে গেল।

শিমুল গাছটা বিরাট শব্দ করে তাদের উপরে পড়ল, আর সঙ্গে সঙ্গে তাদের আর্ত চিৎকারে আকাশ বাতাস ভরে গেল। একটা মৎছা- দুও সেদিন রক্ষা পেলনা।

এইভাবে আবেৎ এর বুদ্ধির ফলে সেই গ্রামের লোক মাৎছা-দু মাৎছা-বেৎ এর কবল থেকে মুক্তি লাভ করল।

কথক: ধরণ সিং সাংমা, তুরা, গারো হিলস্

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা