ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রচলিত রীতিনীতি ও প্রথা

Jumjournal
Last updated Jan 25th, 2020

3055

featured image

ত্রিপুরা পরিচিতি

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ১১টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হলো ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী। ত্রিপুরা সমাজ মূলতঃ মঙ্গোলীয় জনগোষ্ঠীর টিবোটো-বাৰ্মেন শাখার বোড়ো শ্রেণীভূক্ত ভাষাভাষী একটি জনগোষ্ঠী।

পার্বত্য তিন জেলা বা তিন সার্কেলের মধ্যে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় (মং সার্কেলের) বসবাস করে। বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলাতেও (বোমাং ও চাকমা সার্কেল) তাদের বসবাস রয়েছে।

 

ত্রিপুরা প্রথাগত আইনের উৎস

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইন প্রধানতঃ তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও গোত্রগত প্রথা, ধর্মীয় বিশ্বাস, দেবতা-অপদেবতা সহ প্রাকৃতিক শক্তির প্রতি আনুগত্য, তা পূজা-পার্বণ এবং জুম চাষ নির্ভর জীবনধারার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

বাংলাদেশে বসবাসকারী ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ১৬টি গোত্রের বিভিন্ন উপগোত্রভেদে তাদের পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ও রীতিনীতি পালনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যতিক্রম ও তারতম্য বিদ্যমান।

যে কোনো প্রাচীন জনগোষ্ঠীর গোত্র-উপগোত্রের ব্যাপকতা নিয়ে গড়ে উঠা সমাজ ব্যবস্থায় এ ধরণের বৈসাদৃশ্য থাকাটা তাদের স্বকীয় স্বত্বার ভিন্নতা বা বিভেদ নয়।

আদিবাসী ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সুপ্রাচীনকালের সমাজ ব্যবস্থায় তাদের গোত্র, উপগোত্রভেদে সামাজিক রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান, ভাষা, সংস্কৃতি, লোকবিশ্বাস ও ধর্মীয় মূল্যবোধের কিছু ব্যতিক্রম বা তারতম্য তাদের বর্তমান জীবনধারায়ও রয়েছে।

তা সত্ত্বেও তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইনসমূহ অভিনান জাতিসত্তার চেতনা হতে উদ্ভুত। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী তাদের পারিবারিক, সামাজিক ও গোত্রগত শাসন-শৃঙ্খলা অক্ষুন্ন রাখতে অভিন্ন ও সর্বজনগ্রাহ্য বিশেষ কিছু রীতিনীতি ও প্রথাসমূহকে অনুসরণ করে থাকে।

সুপ্রাচীনকাল হতে আদিবাসী সমাজের স্মৃতি ও শ্রুতি নির্ভর এ সকল রীতিনীতি ও প্রথাসমূহকে সামাজিক বিকাশ ও বিবর্তনের ধারায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইন রূপে বিধিবদ্ধ আকারে সংরক্ষণের ভবিষ্যৎ প্রয়োজনের তাগিদে এখানে গ্রন্থনা করা হলো, যার অপরিসীম আইনী গুরুত্ব রয়েছে।

ব্রিটিশ শাসনামলের পূর্ব হতে ত্রিপুরা সমাজে নারান/রোয়াজা এ সকল প্রধান বিশেষত পাড়া প্রধান বা গ্রাম প্রধানের মাধ্যমে যাবতীয় সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তি এবং প্রতিবিধান হয়ে আসছে। ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের আওতায় কার্বারী, হেডম্যান ও সার্কেল চীফ এ তিনটি স্তরে সামাজিক বিচার কাঠামোকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়া হয়।

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী তাদের সামাজিক দায়-দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিপালনের পাশাপাশি সামাজিক অধিকার ও মর্যাদা ভোগ যেমন করে তেমনি সমাজের শাসন-শৃঙ্খলা এবং রীতিনীতিসহ নিজেদের কৃষ্টি, ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে সমাজের কিছু বিধি নিষেধও মেনে চলে।

একই সাথে সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস এবং প্রাকৃতিক শক্তির প্রতি আনুগত্য থেকে উদ্ভুত আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি ও প্রথা অনুসরণের মাধ্যমে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সর্বজনগ্রাহ্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইনের উদ্ভব হয়েছে।

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর একটি অংশ বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বী এবং ইদানীংকালে তাদের কিছু অংশ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী হলেও তারা প্রথাগত আইনের প্রতি অনুগত।

১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশনের আওতায় সৃষ্ট কার্বারী, হেডম্যান, সার্কেল চীফ এ তিনটি প্রাতিষ্ঠানিক স্তরের সামাজিক ও পারিবারিক আদালত হতে বিভিন্ন সময়ে প্রদত্ত সিদ্ধান্ত এবং প্রতিবিধানের দ্বারা ত্রিপুরা সমাজের সর্বজনগ্রাহ্য অভিন্ন প্রথাগত আইনসমূহ স্বীকৃতি অর্জন করেছে।

পাশাপাশি আধুনিক ত্রিপুরা সমাজের মধ্যে উন্বত সামাজিক ও পারিবারিক বিরোধসমূহ ইদানীংকালে বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়ে আসছে, যার দ্বারা সমাজের প্রাচীন প্রথা, আচার-অনুষ্ঠান ও খ্রীতিনীতিসমূহের পর্যায়ক্রমিক সংস্কার হচ্ছে।

বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে আইনের সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে এভাবে, ‘আইন অর্ধ কোনো আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, প্রজ্ঞাপন ও অন্যান্য দলিল এবং বাংলাদেশে আইনের ক্ষমতা সম্পন্ন যে কোনো প্রথা বা রীতি’।

প্রথাগত আইন সম্পর্কে অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যায় যা কিছুই থাকুক না কেন সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা অনুসারে প্রথাগত আইন অবশ্যই বাংলাদেশে প্রচলিত সকল ধরণের আইনের সমকক্ষ।

 

পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের বিচার ব্যবস্থা

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে চাকমা সার্কেলে আদিবাসীদের সমাজের প্রধান বিচারক হলেন চাকমা চীফ/চাকমা রাজা; বোমাং সার্কেলে আদিবাসীদের সমাজের প্রধান বিচারক হলেন বোমাং চীফ/বোমাং রাজা মং সার্কেলের চাকমা ব্যতীত আদিবাসীদের সমাজের প্রধান বিচারক হলেন মং চীফ/মং রাজা। তাঁদের অধীনস্থ সার্কেলে তাদের অধীনস্থ আদালতগুলিই হলো সংশ্লিষ্ট আদিবাসী সমাজের জন্যও সর্বোচ্চ (আদিবাসী) আদালত।

তাঁরা স্ব স্ব সার্কেলের আদিবাসীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচার করে থাকেন এবং স্ব স্ব মৌজার হেডম্যানদের বিচারের কোনো রায়ের বিরুদ্ধে তাদের আদালতে আপীল করা হলে সে বিচারও করে থাকেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে সার্কেলে চীফরাজাদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলিতে ডেপুটি কমিশনারের আদালতে আপীল করা যায়।

পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমা সার্কেলে চাকমা চীফ/রাজার অধীনস্থ মৌজাগুলিতে স্ব স্ব মৌজা হেডম্যান হলেন ঐ মৌজার আদিবাসী সমাজের মুখ্য বিচারক।

তিনি তার আদালতে নিয়ে এবং প্রয়োজনে তাঁর মৌজাস্থ বিভিন্ন গ্রামপ্রধান কার্বারীদের/সমাজপতিদের (বিশেষ কোন আদিবাসী জনগোষ্ঠীদের ক্ষেত্রে তাদের সমাজপতিদের যেমন; লুসাই, পাংখোয়া, বমদের ‘লাল’ প্রমূখদের) সহযোগিতায় সামাজিক বিচারাদি সম্পন্ন করেন।

অধিক, তার পরিচালনাধীন মৌজার গ্রামপ্রধান কার্বারীদের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাঁর আদালতে কোনো আপীল পেশ করা হলে তাও বিচার করে থাকেন।

হেডম্যান আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ/রাজার আদালতে আপীল করা যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের মৌজাগুলির অন্তর্ভুক্ত গ্রামগুলি সংশ্লিষ্ট গ্রামপ্রধান কার্বারী তার আদালতে কোনো অভিযোগ হলে তার বিচার করেন। প্রয়োজনে হেডমানের নিকট প্রেরণ করেন।

বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যে সকল গ্রামে কার্বারী অনুপস্থিত সেখানে বসবাসকারী ঐ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সমাজপতিগণ সামাজিক বিচারাদি সম্পন্ন করে থাকেন।

 

ত্রিপুরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইন প্রয়োগের অধিক্ষেত্র: বাংলাদেশে ত্রিপুরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইনের অধিক্ষেত্র হিসেবে মূলতঃ চাকমা সার্কেল, বোমাং সার্কেল ও মং সার্কেলে বসবাসকারী ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর জন্য প্রযোজ্য। যে সকল আইনের আওতায় ত্রিপুরা সমাজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যা বা বিরোধসমূহের নিষ্পত্তি হয়, তা নিম্নরূপঃ-

ক) ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসন বিধির ৪০ নং বিধি;

খ) ১৯০০ সনের পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন সংশোধনী (২০০৩ সনের ৩৮নং আইন) আইনের ৪(৪) ধারা;

গ) তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন (১৯৮৯ সনের ১৯, ২০ ও ২১ নং আইন)-এর ৬৬ ধারামতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রীতিনীতি, প্রথা ইত্যাদি বিষয়ক সামাজিক বিচার এবং ১ম তফশীলের ২৩নং কার্যাবলীর অধীনে;

ঘ) পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের ২২(ঙ) ধারামতে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে ত্রিপুরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইনকে প্রচলিত প্রথা ও রীতিনীতির ভিত্তিতে সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে প্রয়োগ ও প্রযোজ্য হতে পারে।

ঙ) (২০০১ সনের ৫৩নং আইন) পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের লং ধারামতে (ক) পুনর্বাসিত শরণার্থীদের ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নিস্পত্তি করা (খ) আবেদনে উল্লেখিত ভূমিতে আবেদনকারী, মেমতে সংশ্লিষ্ট প্রতিপক্ষের স্বত্ব বা অন্যবিধ অধিকার পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রচলিত আইন ও রীতি অনুযায়ী নির্ধারণ এবং প্রয়োজনবোধে

দখল পুনর্বহাল।

 

ত্রিপুরা ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইন যার উপর প্রযোজ্য নয়:

১। যদি তিনি ঘোষণা দিয়ে ও নিজ আচার-আচরণে ত্রিপুরা পরিচিতি ত্যাগ করেন;

২। ত্রিপুরা কোনো পুরুষ বা মহিলা যদি ধর্মান্তরিত ও জাতিচ্যুত হয়ে ধর্মাবলম্বী বা জনগোষ্ঠী হতে স্ত্রী বা স্বামী গ্রহণ করেন এবং ত্রিপুরা সামাজিক রীতিনীতি ও প্রচলিত প্রথা পরিহার করেন।

 

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর উসুই ও রিয়াং-এ দুটো শাখাসহ তিন পার্বত্য জেলায় এদের জনসংখ্যা আনুমানিক ১ লক্ষ ৫০ হাজার। তন্মধ্যে বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বসবাসরত উসুই ও রিয়াংদের সংখ্যা আনুমানিক ৩০ হাজার। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর উপভাষা ভিত্তিক মোট ৩৬টি গোত্র ও প্রতি গোত্রে ৪/৫টি উপ-গোত্র রয়েছে। বাংলাদেশে তাদের ১৬টি গোত্রের বসবাস রয়েছে।

 

গোত্র তালিকা: (১) নাইতং (২) ফাতং (৩) গাবিং (৪) দেইনদা (৫) টংবাই (৬) মংবাই (৭) খালি (৮) মুকচাক (৯) আসলং (১০) আনক (১১) রিয়াং (১২) উসুই (১৩) কেওয়া (১৪) কেমা (১৫) বেরী (১৬) দামপা (১৭) গুরপাই (১৮) জামাতিয়া (১৯) হাপাং (২০) হালাম (২১) গর্জাং (২২) পাইগ্রা (২৩) খাকুলু (২৪) মুইচিং (২৫) গারো (২৬) বোরো (২৭) রুক্কীনি (২৮) কলই (২৯) মালম (৩০) রাংখল (৩১) জানতং (৩২) চরই (৩৩) বং (৩৪) বংচের (৩৫) কাহার (৩৬) কলি।

তন্মধ্যে ১ হতে ১৪ ক্রমিক পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং ১৫ ও ১৬ ক্রমিকের দুইটি শাখা সিলেটে বসবাস করে। পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৪টি উপভাষার গোত্রের মধ্যে নাইতং, ফাতং এবং উসুই ভাষাভাষী ত্রিপুরাদের সংখ্যা বেশী।

 

ব্যাখ্যা: রাঙ্গামাটি উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ও গবেষক প্রয়াত সুরেন্দ্র লাল ত্রিপুরা তাঁর ‘পার্বত্য চটগ্রামের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি’ গ্রন্থে ত্রিপুরাদের ৩৬ দল বা দফা গোত্র) এর তালিকা সন্নিবেশ করেছেন। সেখানে উপরোক্ত তালিকার মুকচাক, বেরী ও বোরো এই তিনটি দফা বা গোত্রের উল্লেখ নেই। তার তালিকায় হারবাং, খারজং, খাইতাক ও পাইতাক এই চারটি দফার উল্লেখ আছে। তিনি বাংলাদেশে ১৬টি গোত্রের বসবাস রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।

দ্রষ্টব্য: ৩৬টি গোত্র তালিকার ২০, ২৫, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১ ক্রমিকের ৭টি গোত্রের মধ্যে বোরো ও জানতং ব্যতীত অবশিষ্ট ৫টি গোত্রের লোকেরা বর্তমানে ত্রিপুরা রাজ্যে বসবাস করলেও তারা নিজেদেরকে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর গোত্র বলে স্বীকার করে না, বরঞ্চ তারা সকলেই কুকি পরিচয় দেয়। এছাড়া ১৫, ১৬ ও ১৭ ক্রমিকের ৩টি গোত্র প্রকৃতপক্ষে একই গোত্রের উপ-গোত্র, যারা বর্তমানে সিলেটে বসবাস করে। ৩৬ গোত্রের তালিকার বাইরে আরও কিছু গোত্র, উপগোত্র আছে। যেমনঃ- (১) মাইপালা (২) কয়তিয়া (৩) দাংগী (৪) মুদি (৫) হারবাং। আবার মাইপালা গোত্রের ৫ উপ-গোত্র হলো- (১) দদবিয়া মাই পালা (২) কেলাবারিয়া মাইপালা (৩) মুরাংকুং মাইপালা (৪) মাইমিকালক মাইপালা (৫) সিকাম মাইপালা। কয়তিয়া গোত্রের ৩ উপ-গোত্র হলো- (১) মূল কয়তিয়া (২) হাপাং কয়তিয়া (৩) বফাং দুঝোকুং কাতিয়া (সূত্রঃ- ভূমিধর রোয়াজী, হেডম্যান, ২৪১নং লতিবন মৌজা, পানছড়ি, খাগড়াছড়ি)।

 

উসুইদের ১২টি গোত্রের মধ্যে প্রধান চারটি হলো- (১) পাঞ্জি (২) জলাই (৩) ওয়ারেইং (৪) কাইস্নী। তন্মধ্যে জলাই গোত্র তিনভাগে এবং পাঞ্জি গোত্র দুই ভাগে বিভক্ত।

গোত্র                              উপ-গোত্র

১। পানি >    (ক) পাতি পাইমা (খ) পানি স্তেমা

২। জলাই > (ক) জুলাই ওয়াওচুঃ (খ) জলাই তাওখা

(গ) জলাই তাওমসা

৩। ওয়ারেইং

৪। কাইস্নী

 

ব্যাখ্যা: ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীভুক্ত এক পুরুষের ঔরসে জন্মগ্রহনকারী ব্যক্তি ত্রিপুরা পরিচয়ের অধিকারী। নিজেকে ত্রিপুরা হিসেবে পরিচয় দান করে, এরূপ একজন ত্রিপুরা পুরুষের ঔরসে তাকে জন্মগ্রহণ করতে হয়। অর্থাৎ তাকে বিপুল জাতিসত্তার কোনো একটি পরিবারে জন্ম নিতে হয়। তবে তার মাকে ত্রিপুরা নারী হতে হয় এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ভিন্ন কোনো সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠীভুক্ত পুরুষের ঔরসজাত এবং কোনো ত্রিপুরা নারীর গর্ভজাত সন্তান ত্রিপুরা বলে গণ্য হয় না।

মূলতঃ (১) জন্মগতভাবে যিনি ত্রিপুরা তথা ত্রিপুরা পরিবারে জন্মগ্রহণকারী, (২) পিতা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সদস্য, (৩) একজন ত্রিপুরা পুরুষের ঔরসে ও একজন ত্রিপুরা মহিলার গর্ভজাত ভূমি সন্তান কিংবা অবৈধ সন্তানও ত্রিপুরা বলে গণ্য হয়।

(ক) তিনিই ত্রিপুরা যিনি ত্রিপুরা পিতার সন্তান (খ) ভিন্ন জাতি বা জনগোষ্ঠীর কোনো মহিলা যদি ত্রিপুরা পুরুষকে বিয়ে করেন তিনিও ত্রিপুরা (গ) কোনো ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে ত্রিপুরা সামাজিক রীতি ও আচার-আচরণ গ্রহণ করেন তিনিও ত্রিপুরা (ঘ) স্ত্রী ভিন্ন জাতি বা জনগোষ্ঠীর হলেও ত্রিপুরা স্বামীর ঔরসজাত সন্তান ত্রিপুরা হয়, যদি উক্ত সন্তান সাবালকত্ব অর্জনের পর ত্রিপুরা পরিচিত পরিত্যাগ না করে। (সূত্রঃ খগেশ্বর ত্রিপুরা, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ)।

 

জন্ম, মৃত্যু, বিবাহে রীতিনীতির বাধ্যবাধকতা: জন্ম, মৃত্যু, বিবাহ মানব জীবনের এ তিনটি অধ্যায়কে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও আচার-অনুষ্ঠান দ্বারা সমাজসিদ্ধ করেছে। এসব রীতি ও আচার-অনুষ্ঠানকে ত্রিপুরা সমাজে অলঙ্ঘনীয় করা হয়েছে।

ত্রিপুরা সমাজের বিভিন্ন গোত্র ও উপ-গোত্রভেদে এসব রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান পালনের ক্ষেত্রে কিছু কিছু ব্যতিক্রম ও সুখ তারতম্য লক্ষ্যণীয়। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের মাঝে প্রচলিত ও সর্বজনীনভাবে গ্রহণযোগ্য প্রথা এবং রীতিনীতিসমূহ অনুসরণের বাধ্যবাধকতা সমাজে রয়েছে।

 

শিশু জন্মের পর সামাজিক আচার: ত্রিপুরা গোষ্ঠীর সামাজিক প্রথা অনুযায়ী নবজাত শিশুর জন্য শুদ্ধি করা বাধ্যতামূলক। নবজাতকের নাভিরজ্জু শুকিয়ে ঝরে গেলে ‘আবিয়াক সুমানি’/কমাসেং অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তা না হলে সমাজের কাছে শিশুটিকে অপবাদের ভাগীদার হতে হয়। এমনকি শিশুটি বয়োঃপ্রাপ্ত হলেও সামাজিক কোনো শুভ কাজে অংশগ্রহণ অথবা ভাল বংশের সাথে বিবাহ সম্বন্ধ করার সুযোগ থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়।

 

জন্মশুদ্ধি অনুষ্ঠান: সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর ‘কুচাই’ নামক গাছের ফল অথবা পাতার সাথে কাঁচা হলুদ ও ঘিলার ভেতরে থাকা শাঁস নিয়ে একত্রে গুঁড়ো করে একটি বাঁশের চোঙায় অথবা পাত্রে পানির সাথে মেশানো হয়। সেই পানিতে আমপাতা বা “চাখানা” নামের এক জাতীয় ঘাসপাতা চুবিয়ে প্রসূতি ও ধাত্রীর গায়ে ছিটানো হয়।

এরপর উভয়ে নদীর ঘাটে এসে ডুব দিয়ে স্নান করে শুচিশুদ্ধ হয়। সেই নদীর ঘাটে বা ছড়ায় মোরগ বলি দিয়ে পূজা দিতে হয়। সন্তান প্রসবকালে উপস্থিত ধাত্রী এবং ধাত্রীকে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্যকারীদের ”আবিয়াক সুমানি” অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করা হয়।

পাড়ার রাস্তার চৌমাথায় একটি ডিম দিয়ে দেবতা ”লাম্প্রা মাতাই”কে পূজা দিতে হয় যেন শিশুর মায়ের ওপর অপদেবতার দৃষ্টি না পড়ে। অচাই (ওঝা) দ্বারা সেই পূজা শেষে নিমন্ত্রিত অতিথিদেরকে ভোজে আপ্যায়ন করা হয়।

তারপর একটি কুলাতে কলাপাতা বিছিয়ে তার ওপর জলপূর্ণ ঘটে অম্রপল্লব ও সিদূর দিয়ে মঙ্গলঘট সাজিয়ে স্থাপন করা হয়। ঘটের সামনে কুলাতে ৩/৫/৭টি মাটির প্রদীপে সলতে দিয়ে সরষের তেলে চুবানো হয়। নবজাত শিশুকে ধাত্রীর কোলে দিয়ে এক বোতল মদ, নগদ টাকা ও এক জোড়া পরনের কাপড় (নিজ সামর্থ অনুসারে) ধাত্রীর হাতে তুলে দিয়ে সন্তানের মাকে বলতে হয় ”আপনার পরিশ্রমের মূল্য দিলাম”।

ধাত্রী এ সময় নবজাত শিশুকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়ে সন্তান বুঝে নিতে বলে। এরপর অচাই (ওঝা) সহ ৩/৫/৭ জন মিলে শিশুর জন্য তাদের প্রত্যেকের পছন্দের নাম রেখে নিজ হাতে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়; যার প্রদীপটি দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত জ্বলতে থাকে, তার রাখা পছন্দের নাম দিয়েই শিশুর নামকরণ হয়। জন্ম শুদ্ধি অনুষ্ঠান উপলক্ষে শূকর বা ছাগল বলি দিয়ে পাড়া-পড়শি ও আত্মীয়স্বজনকে নিমন্ত্রণ খাওয়ানো হয়।

 

মৃতের সৎকার ও সামাজিক আচার: সনাতন ধর্মাবলম্বী ত্রিপুরা সমাজে কারো মৃত্যু হলে মৃতের পায়ের কাছে একটি মুরগির বাচ্চা এনে কাটা হয়। তারপর মৃত ব্যক্তিকে সুগন্ধি সাবান দিয়ে স্নান করিয়ে বাঁশের তৈরী শবাধারে তুলে শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। মৃত ব্যক্তির বাড়ি থেকে শ্মশান পর্যন্ত সাদা সুতা টেনে আনা হয়।

মৃতের জ্যেষ্ঠ পুত্র অথবা তার অনুপস্থিতিতে যে কোনো পুত্র কিংবা পুত্রের অবর্তমানে যে কোন নিকটাত্মীয় মৃতের মুখাগ্নি করে থাকে। মুখাগ্নিকারী ব্যক্তি আগুনের মশালকে নিজের পেছনদিকে উল্টো করে হাতে ধরে চিতা প্রদক্ষিণ করার পর চিতায় (শবসজ্জায়) আগুন ধরিয়ে দেয়।

শবদাহের পরদিন চিতা থেকে দুই ভস্ম ও অস্থি সমূহ পরিষ্কার করে তুলে নিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। শবদাহে তের দিন পর শ্রাদ্ধ ক্রিয়ার আয়োজন করা হয়। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে দান-দক্ষিণা ও পিন্ড উৎসর্গ করা হয় এবং মৃতের আত্মার উদ্দেশ্যে ভাত, নানা তরকারী, ফলমূলসহ বিবিধ সুস্বাদু খাবার উৎসর্গ করা হয়।

শ্রাদ্ধানুষ্ঠান উপলক্ষে আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীর জন্য ভোজের আয়োজন করা হয়। ত্রিপুরা সমাজে সম্পদশালী বা অর্থবান ব্যক্তির শবদাহ অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনেক সময় রথ তৈরী করা হয়। রথে শবদেহ রেখে ঢোলের তালে-তালে দোলানো হয়। এটিকে ”মাংগাইককগ” বলা হয়।

আবার চার চাকাযুক্ত রথে মৃতদেহ রেখেও রথ টানা হয়। এই অনুষ্ঠানকে ”রাথাসগ” বলা হয়। স্বর্গের দল ও নরকের দল হিসেবে বিভক্ত দু’দলের রথ টানাটানিতে স্বর্গের দলকেই সাধারণতঃ জেতানো হয়।

ত্রিপুরা সমাজে দাঁত উঠে নাই এমন শিশুর মৃত্যু হলে মাটিতে সমাধি দেয়া হয়। ত্রিপুরা পরিবারে কারো মৃত্যুর পর মৃতদেহের পাশে ধুপ-দ্বীপ জ্বালিয়ে রাখা হয়। একটি মুরগীর বাচ্চা কেটে মৃত ব্যক্তির আত্মার উদ্দেশ্যে ভাত দেওয়া হয়। মৃতদেহকে সঙ্গে সঙ্গে দাহ করা সম্ভব না হলে ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ, কীর্তন করা হয়।

মৃতদেহ শ্মশানে নেবার জন্য বাঁশ দিয়ে শবাধার তৈরী করে তা রঙিন কাগজে সাজানো হয় । শবাধারে পুরুষের বেলায় একটি দা এবং মহিলার ক্ষেত্রে একটি ঝুড়ি বা নখাই ও কাপড় বোনার সরঞ্জাম (বিশেষ করে বিয়ং বা রাচামি) দিতে হয়।

মৃতের উদ্দেশ্যে শ্মশানে ভাত উৎসর্গ করার জন্য একটি ঝুড়িতে চাউল, তরকারী, শুটকী ও মুরগীসহ একটি কলসী নিতে হয়। এছাড়াও বাঁশের তৈরী একটি ছাতা ও একটি “থাবা” (শাপলা আকৃতির) শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়।

চিতা সাজানোর সময় মৃতদেহ পুরুষের হলে পাঁচ স্তরে ও মহিলা হলে সাত স্তরে লাকড়ি বা কাঠ দিতে হয়। তবে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ত্রিপুরাদের উসুই গোত্রের লোকদের খ্রিস্ট ধর্মীয় রীতিতে সমাহিত করা হয়।

উত্তর-দক্ষিণমুখী করে সাজানো চিতায় উত্তর দিকে মৃতের মাথা এবং দক্ষিণে পা রাখা হয়। শবাধার সহ সাতবার চিতা প্রদক্ষিণ শেষে মৃতের উদ্দেশ্যে প্রণাম করে চিতায় মৃতদেহ তুলে দেয়া হয়।

চিতায় যেদিকে মরদেহের মাথা থাকে সেদিকে বাবা ও বাঁশের ছাতাকে চার হাত দুরত্বে মাটিতে পুঁতে দিয়ে সেখানে পুকুর আকৃতির একটি ছোট গর্ত খুঁড়ে তাতে কলা পাতা বিছিয়ে সামান্য পানি ও কাঁচা হলুদ দেয়া হয়। পরলোকে মৃতের বৈতরণী পার হবার জন্য সেই পুকুরে পয়সা দেয়া হয়।

হরিনাম কীর্তন করে সাতবার চিত্র প্রদক্ষিণ ও প্রণাম করার পর মৃত ব্যক্তির ছেলে বা নিকটাত্মীয় যে কোনো একজন সুতার তৈরী সলতেকে সরিষা তেলে ভিজিয়ে থাবায় প্রদীপ জ্বালিয়ে দেয়। মুখাগ্নিকারী ব্যক্তি চিতায় আগুন ধরিয়ে দেবার পর অন্য শ্মশানযাত্রীরা একে একে চিতায় আগুন দেয়।

চিতায় মরদেহের মাথার দিকে মাটিতে খোঁড়া পুকুরের পাশে দাড়িয়ে একটি বাঁশের চোত্তায় পানি নিয়ে অচাইকে দিয়ে মন্ত্র পড়ে মৃত ব্যক্তির নিকট হতে বিদায় নিতে হয়।

চিতায় আগুন দেবার পর শ্মশানে রান্না করা মুরগী ও অন্যান্য তরকারীসহ ভাত মৃত ব্যক্তির আত্মা এবং লেংটা লেংটি দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়।

বাঁশ দিয়ে একটি নৌকা তৈরী করে তাতে পালিশ লাগিয়ে সেই নৌকার মধ্যে চিতা থেকে সগ্রহ করা মৃতের মাথার মগজ রেখে তা নদী বা ছড়ায় ভাসিয়ে দিতে হয়।

মৃতদেহ সম্পূর্ণ পুড়ে যাবার পর চিতা থেকে তার কপালের অহি নিয়ে এক টুকরো কাপড়ে জড়িয়ে রেখে দেয়া হয়। এই অস্থি শ্ৰাদ্ধালে বা তীর্থ স্থানে গিয়ে বিসর্জন দেবার প্রীতি আছে।

শ্মশানে মৃতের আত্মার উদ্দেশ্যে ভাত উৎসর্গ করার সময় তার সন্তানদের মধ্যে যে কোনো  একজন বা মুখাগ্নিকারীকে শপথ নিতে হয় যে, সেদিন হতে ১৩ দিন পর মৃতের উদ্দেশ্যে খাবার দেয়া হবে এবং এই তেরদিন পর্যন্ত শপথকারী সম্পূর্ণ নিরামিষ ভোজী হয়ে সংযম পালন করবে।

মৃতের আত্মা সেদিন যেন আহার গ্রহন করে শেষ বিদায় নিয়ে যায়। শপথ নেবার পর এক ফালি কাপড় ছিড়ে তাতে লোহার চাবি বা লোহার টুকরো বেঁধে শপথকারী নিজের শরীরে ধারণ করে। শপথকারী তার সংযম পালনের ১৩ দিন পর্যন্ত চুল, দাড়ি, নখ কিছুই কাটতে পারে না।

সেলাই করা কোনো বস্ত্র গায়ে দিতে পারে না এবং প্রসাধনী তেল কিংবা সুগন্ধি সাবান ব্যবহার করে না। উঁচু আসনে বসা এবং ভালো বিছানা বা কারো সঙ্গে এক বিছানায় ঘুমানো তার জন্য নিষেধ। ঘরের বারান্দা বা কোনো পরিচ্ছন্ন স্থানে আলাদাভাবে রান্না করে তাকে খেতে হয়।

খাবার সময় মুখে বালি বা কয়লা পড়লে সে বেলার আহার বন্ধ রাখতে হয়। এভাবে সংযম পালন করে ১৩ দিন পূর্ণ হলে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে শ্রাদ্ধ ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। শ্রাদ্ধ ক্রিয়ার আগের রাতে ধর্মীয় পুঁথি বা পুস্তক পাঠ, কীর্তন এসবের আয়োজন করা হয় সামর্থ অনুসারে।

শ্রাদ্ধের দিনে মৃতের আত্মার উদ্দেশ্যে খাবার উৎসর্গ করার জন্য শ্মশানে তার চিতার পাশে একটি ঘর তৈরী করা হয়। ত্রিপুরাদের গোত্রভেদে  ভিন্ন নকশায় তৈরী করা সে ঘরটিকে রঙিন কাগজে সাজানো হয়।

সেখানে মৃতের ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র দেয়া হয়। এই শ্মশান ঘরকে ত্রিপুরা ভাষায় ‘সিমাংনগ’ বলা হয়। সকাল বেলায় রান্না শেষ করে দুপুরের আগে শ্মশানে গিয়ে প্রথমে শপথকারী একটি কলা পাতায় ভাতসহ তরকারী দেয় এবং পরে অনান্য আত্মীয়রা খাবার তুলে দেয়। শ্মশান ঘরের পাশে লম্বা একটি বাঁশের মাধ্যমে নিশান উড়িয়ে দেয়া হয়।

শ্মশান ঘরের পেছনে থাকা বাঁশের ছাতা ও বাবার নিচে গর্ত খোঁড়া পুকুরে পানি ও কাঁচা হলুদ দিয়ে পরলোকে মৃত আত্মার বৈতরণী পার হবার জন্য সেখানে পয়সা দেয়া হয়। আড়াই গিড়া (বাঁশের পাট) যুক্ত একটি বাঁশের চোঙায় পানি নিয়ে একজন অচাইকে (ওঝা) দিয়ে মন্ত্র পড়ে আত্মীয়স্বজন সকলে মৃতের কাছ থেকে শেষ বিদায় নেয়।

এরপর আত্মীয়-স্বজনসহ আমন্ত্রিত সকলের ভোজ শেষে একজন ওজন বা প্রবীণ ব্যক্তিকে প্রণাম করে শপথকারী তার নিরামিষ খাওয়া শেষে আমিষ খাবার অনুমতি গ্রহণ করে।

”খুমপালা” গাছের (বিউ ফুল গাছ নামেও স্থানীয়ভাবে পরিচিত) একটি কচি ডালকে শপথকারী তার পেছনে নিয়ে ভেঙ্গে দু’ টুকরো করে মূতের সাথে সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটায়। এভাবেই ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সামাজিক রীতি অনুসারে মৃতের সৎকার সম্পন্ন হয়।

ইদানীং কালে শহুরে সমাজ ব্যবস্থায় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর কোনো কোনো পরিবারে মৃত ব্যক্তিকে শ্মশানে নেবার পূর্বে মৃতের পায়ের আঙ্গুলের সাথে একটি মুরগীর বাচ্চাকে সুতা দিয়ে বেঁধে সেই সুতা কেটে মৃতের সাথে তার পরিবারের সম্পর্ক ছিন্ন করার রেওয়াজ লক্ষ্য করা যায়।

মূলতঃ এই রীতিটি ভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত রীতির অনুকরণ মাত্র, যা ত্রিপুরা সামাজিক রীতিসম্মত নয়। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা খ্রীস্ট ধর্মীয় রীতিতে মুতে সৎকার ও আচার অনুষ্ঠান করে থাকে।

 

কতিপয় সামাজিক রীতিনীতি

লওয়া (ঐতিহ্যগত ভূমি অধিকার): ত্রিপুরা সমাজের রীতি অনুসারে জুম চাষের জন্য নির্বাচিত স্থানে বিশেষ চিহ্ন দিয়ে ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠা করাকে লওয়া বলে। কোনো ব্যক্তি যে স্থানে জুম চাষের জন্য যে বছর জমি নির্বাচন করে সেই স্থানে `লওয়া’ (চিহ্ন) পুঁতে দিতে হয়। পরবর্তী বছরে সেই জুমের যে কোনো একদিকে তার প্রয়োজন মতো জমিতে জুম চাষ করতে পারবে। সাত বছর পর সেই ব্যক্তি একই স্থানে আর একবার জুম চাষ করার অধিকার পায়।

লওয়া দেবার প্রচলিত নিয়ম: ত্রিপুরা সমাজের লোকবিশ্বাস অনুসারে জুম চাষীকে তার স্বপ্নের ফলাফল বিচার অনুসারে এতদিন নির্ণয় করে ”লওয়া” (চিহ্ন) দিতে হয়। প্রচলিত নিয়মানুসারে লওয়া দিতে যাবার পূর্ব রাতে জুমচাষীকে স্ত্রী-পুত্রের কাছ থেকে আলাদা বিছানায় ঘুমাতে হয়।

ঘুমাতে যাবার আগে হাত-মুখ ধুয়ে শুদ্ধভাবে বিছানায় যেতে হয়। স্বপ্নে মাছ পাওয়া, হাতির পিঠে চড়া ও কোনো যুবতীকে ঘরে আসতে দেখা শুভ লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এরূপ শুভ লক্ষণ দেখে পাহাড়ের জঙ্গলে গিয়ে উর্বর মাটি দেখে কিছু জায়গা পরিষ্কার করে নিয়ে দুই বা আড়াই হাত লম্বা গাছ বা বাঁশের তিনটি টুকরা সমান্তরালভাবে মাটিতে পুঁতে দিতে হয়, (মাঝেরটি কিছুটা উচু হয়)।

এরপর সামনের কিছু মাটি সমান করে বাঁশের ফালির ওপর তিন টুকরা পাতা এবং পাতার ওপর কেঁচোর ঢিবি থেকে নেয়া মাটি দিতে হয়। তারপর বাঁশের চোঙাতে করে পাহাড়ি ছড়ার পানি এনে রেখে চন্দ্র, সূর্য, বসুমতি, গঙ্গা এদের স্মরণ করে এবং সাক্ষী রেখে জুম চাষের স্থান নির্বাচনের ‘লওয়া’ চিহ্ন দেয়া হয়।

একই স্থানে একজন জুম চাষী ‘লওয়া’ চিহ্ন দেখার পর অন্য কারোর সেখানে ‘লওয়া’ দেবার অধিকার থাকে না।

 

অবৈধ দৈহিক মিলনের দন্ড: ত্রিপুরা সমাজের নিয়মানুসারে অবৈধ দৈহিক মিলনকারীর ব্যবহৃত বস্ত্র বা যে কোনো নমুনা কেড়ে এনে সমাজের বিচারপতি বা প্রবীণ ব্যক্তির নিকট জমা নিয়ে অভিযোগ করতে হয়। অতঃপর সামাজিক বিচারে অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হলে পুরুষকে নেংটি এবং মহিলাকে আড়াআড়িভাবে বিনাই (পরনের কাপড়) পরিয়ে মাথার চুল চারভাগে কেটে ফেলা হয়।

শূকরের নাড়িভূঁড়িসহ ভাঙ্গা কলসীর গলা ও আঁটার মুড়ো রশি দিয়ে গলায় বেঁধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অপরাধীকে ক্ষমা চাইতে হয়।

এরূপ অপবাধের বিচারে অভিযোগকারীগণকে পাড়ার সবচেয়ে বড় শূকরটি কেটে খাবার অনুমতি দেয়া হয়। সেই শূকরের মূল্য এবং খাওয়ায় খরচ অভিযুক্ত পুরুষকে দশ আনা অর্থাৎ ১০/১৬ অংশ এবং মহিলাকে ছয় আনা অর্থাৎ ৬/১৬ অংশ পরিশোধ করতে হয়।

 

মাঙ্গলিক আচার: ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মাঙ্গলিক দেবতা হলে বুরাসা দেবতার প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্র কারায়া আর গরায়া। জন্ম, বিবাহ, মৃত্যু সংক্রান্ত প্রত্যেকটি মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে তাদেরকে পূজা দেয়া হয়। পূজা দেবার জন্য কাচা বাঁশের বেদী সাজিয়ে একটি মোরগ ও একটি মুরগী এবং একটি ডিম উৎসর্গ করা হয়। এই পূজার আশীর্বাদ নিয়ে যে কোনো তত কাজ সম্পাদন করা হয়।

 

পূজার নৃত্য: সমাজের নিয়ম অনুসারে বছরের প্রথমে “কাথারক পূজা”, ফসল উৎপাদনের সময় “মাইনযুগমা পূজা”, ফসল সংগ্রহের পর “নুখুংনি পূজা” বা “বাৎসরিক পূজা”, বছরের শেষ প্রান্তে কারায়া, গরয়া দেবতার পূজা করা হয়। বছরের শেষে একজন ওঝার নেতৃত্বে গরায়া নৃত্য পরিবেশন করে গ্রামের প্রতিটি ঘরে গৃহকর্তার নিকট উক্ত দেবতার আশীর্বাদ বিতরণ করা হয়।

এই আশীর্বাদ বিতরণে প্রধান উদ্দেশ্য হলো গহীন বন পার হয়ে জুমের কাজে যাবার সময় যেন অপদেবতার খারাপ দৃষ্টিতে না পড়ে এবং বনের হিংস্র জীবজন্তুর দ্বারা আক্রান্ত না হয়।

 

সমাজপতি নিয়োগ: ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সামাজিক আইনসমূহ পরিচালনা এবং বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য যে সব বিচারপতি ও সহকারী বিচারপতি নিয়োগ বা মনোনীত করা হয়, সেক্ষেত্রেও কারায়া, গরয়া, মাঙ্গলিক দেবতার পূজার মাধ্যমে গ্রামের সবাইকে এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিমন্ত্রণ করে খাইয়ে সমাজের স্বীকৃতি নিতে হয়।

 

পিতৃত্বের অধিকার: কোনো যুবতীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে গোপনে পালিয়ে যাবার সময় যুবককে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে একজন বিশিষ্ট বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হয়। অত্যন্ত গোপন জায়গায় যুবক-যুবতীর বিবাহ হয়। রাত্রিযাপনের জন্য একজন বিশ্বাসী আত্মীয়ের কাছে যুবতীকে রাখা হয়।

ভোর হলে তৃতীয়পক্ষ হিসেবে উপস্থিত সাক্ষীকে যুবতীর মা-বাবার ঘরে গিয়ে জানিয়ে দিতে হয় যে, তার মেয়েকে অমুকের ছেলে বিবাহ করার জন্য নিয়ে গেছে। সেখানে তাদের সঙ্গে তৃতীয়পক্ষ সাক্ষী হিসেবে তিনি ছিলেন। মেয়ের কোনো শ্লীলতাহানি হয়নি বলে তাকে সাক্ষ্য দিতে হয়।

বক্তব্য শুনে যুবতীর বাবা যদি তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে ফেরৎ এনে দেবার নির্দেশ দেন, তাহলে বিবাহিত যুবতীকে তার বাপের বাড়িতে পৌঁছে দিতে হয়।

 

বিচ্ছেদ রীতি: দাম্পত্য কলহের কারণে সামাজিক আদালতে যদি স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার স্বামীর অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য প্রমাণিত হয় তাহলে স্ত্রীর চরিত্র সংশোধনের জন্য ১৫ দিন অন্তর তিনবার সময় দেয়া হয়। এতেও তার চরিত্র সংশোধন না হলে স্বামীকে বিচ্ছেদ পত্র প্রদানের অনুমতি দেয়া হয়। তবে বিচ্ছেদ প্রদানকালে স্ত্রীর বিরুদ্ধে যদি পর পুরুষ সম্ভোগের কোনো প্রমাণ না থাকে তবে তাকে কিছু ভরনপোষণ প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু পর পুরুষ সম্ভোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে এক লয়ে স্ত্রীকে বিচ্ছেদ নিয়ে যেতে হয়।

 

ধর্মীয় বিশ্বাস ও ত্রিপুরা সামাজিক প্রথা: আদিবাসী ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী মলতঃ সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসে শৈব বা শিব পূজা এবং বৈষ্ণব মতেরও প্রচলন রয়েছে। তারা শিব ও কালী পূজাসহ মঙ্গলদায়ক দেব-দেবীর পূজা করে। বর্তমানে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর একটি অংশ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী।

প্রকৃতি পূজারী হিসেবে ত্রিপুরা সমাজে পশুবলি প্রথার প্রচলন থাকলেও খ্রিস্ট ধর্ম অনুসারী এবং বৈষ্ণব মতাবলম্বীরা এ প্রথা অনুসরণ করে না।

ত্রিপুরা সমাজে অপদেবতা ও ভুত প্রেতের বিশ্বাস রয়েছে। তাদের প্রধান অপদেবতা বুরাসা, যার পরিবারভুক্ত ১৯টি অপদেবতা আছে। ত্রিপুরাদের জন্ম-মৃত্যু বিবাহের মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে বুরাসার প্রথম ও দ্বিতীয় পুত্র কারায়া এবং গরায়ার পুজা করা হয়। এ ছাড়াও রোগ ব্যাধি, বিপদ-আপদ ও অমঙ্গল থেকে রক্ষা পেতে অপদেবতাদেরও পুজা করা হয়।

ত্রিপুরা সমাজভুক্ত একজন অচাই বা ওঝাকে মদ উপঢৌকন দিয়ে পূজা করানো হয়। তাদের নিজস্ব তান্ত্রিকাচারে পূজার মন্ত্র ও পূজা পদ্ধতির সাথে অন্য কোনো জনগোষ্ঠী বা হিন্দু পুরোহিতদের পূজার রীতি বা পদ্ধতির মিল নেই।

ফসল উৎপাদন ও ধন সম্পদ লাভের জন্য ত্রিপুরা সমাজে আড়ম্বরপূর্ণভাবে লক্ষী পূজা করা হয় পশুবলি দিয়ে। তাদের সামাজিক রীতি অনুসারে বছরের প্রথমে ‘কাথারক’ পূজা, ফসল উৎপাদনের সময় ‘মাইনযুগমা’ ও ওঙ্কের’ পূজা, ফসল সংগ্রহের পর ‘নুখুংনি’ পূজা বা বাৎসরিক পূজা, বছরের শেষ প্রান্তে কারাগা-গরায়া দেবতার পূজা দেয়া হয়।

বছরের  শেষে অনুষ্ঠিত এ পূজার আশীর্বাদ একজন ওঝার নেতৃত্বে গ্রামে গ্রামে গরয়া নৃত্য পরিবেশন করে বিতরণ করা হয়। তবে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় মত, পথ ও বিশ্বাসের অনুসরণ সত্ত্বেও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সামাজিক রীতিনীতি এবং প্রথার মধ্যে সকলের উদার অবস্থানের দৃষ্টান্ত রয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভিন্ন ভাষাভাষী ১১টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে ত্রিপুরা সমাজে ধর্মীয় নানা মতের অবস্থানের কারণে সৃষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ ধর্মীয় ভাবধারা তাদের সামাজিক রীতি, প্রথা, আচার-অনুষ্ঠান ও মূল্যবোধকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দিয়েছে।

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর রিয়াং এবং উসুই এ দুটো পৃথক শাখার রীতিনীতি এবং জীবনাচারের ব্যতিক্রম ও তারতম্য সত্ত্বেও তাদের সামাজিক রীতিনীতি ও প্রথার মধ্যে প্রাচীন বিশ্বাস এবং মূল্যবোধ বিদ্যমান রয়েছে। বর্তমানে খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণকারী ত্রিপুরাদের মধ্যে খ্রিস্ট ধর্মীয় রীতিনীতি ও আচার-অনুষ্ঠানের প্রভাব বিস্তার লাভ করেছে।

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও পারিবারিক শাসন-শৃঙ্খলার জন্য বিচারক ও সহকারী বিচারক তথা সমাজপতি নিয়োগ বা মনোনীত করার সময়েও সামাজিক রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়।

এদের পদবী হলো নারান/রোয়াজা। তারা গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে বিচার সম্পন্ন করেন। এভাবেই ত্রিপুরা সমাজের সর্বজনগ্রাহ্য রীতিনীতি ও প্রথাসমূহ তাদের অভিন্ন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক আইনরূপে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

জন্মসূত্রে একজন ত্রিপুরা যতক্ষণ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে ঘোষণা দিয়ে কিংবা আচার-আচরণ দ্বারা ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সামাজিক কুষ্টি, রীতিনীতি ও প্রথা পরিত্যাগ না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ত্রিপুরা হিসেবে গণ্য হন।

 

তথ্যসুত্র:

১। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন, ১৯৯৮।

২। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ (২০০১ সনের ৫৩নং আইন)।

 

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা