একজন বাবু দাস, সংখ্যালঘুতা ও আমাদের একটি গুরুভার

Jumjournal
Last updated Aug 31st, 2021

817

featured image

বাবু দাস হলেন ঢাকায় একা থাকা খুবই সীমিত আয়ের একজন ছাপোষা মানুষ, যাঁকে আমি চিনি দৈবক্রমে। সম্প্রতি কথাপ্রসঙ্গে জানতে পারি বরিশালের গ্রামের বাড়িতে তাঁর বাবার রেখে যাওয়া এক খন্ড জমি নিয়ে তিনি বিপদে পড়েছেন, ‘সংখ্যাগুরু’রা নাকি সেটা গায়ের জোরে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

এমন বহু ঘটনা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিয়মিত ঘটছে ঠিকই, কিন্তু যেটুকু বিবরণ আমি দিয়েছি, তা পড়েই কেউ যদি ধরে নেন যে বাবু দাসের কেইসটা তিনি বুঝে গেছেন, তাহলে ভুল হতে পারে। কারণ আমার বয়ানে একটা প্যাঁচ আছে, যা এবার খোলাসা করছি।

‘সংখ্যাগুরু’ শব্দটা আমার চাপানো, যা আমি বসিয়েছি বাবু দাসের ‘ওরা সংখ্যায় বেশি’ কথার জায়গায়। যাদের সম্পর্কে কথাটা তিনি বলছিলেন, তারা সম্পর্কে তাঁর আপন ‘চাচাতো ভাই’ (এবার উদ্ধৃতি চিহ্নের ভেতরকার ভাষা তাঁরই)।

এই জ্ঞাতিভাইদের বিপরীতে, বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হিসেবে এবং বাড়িতে বিধমা মা, স্ত্রী ও শিশুসন্তান রেখে আসা অবস্থায়, বাবু দাস খুব বিপন্ন বোধ করছেন নিজের ‘সংখ্যালঘুত্ব’ নিয়ে। আরেকটা কথা, বাবু দাস কিন্তু সনাতন ধর্মাবলম্বী নন!

উপরে শুরু করা কথাবার্তা পাঠকের কাছে লঘু মনে হচ্ছে কিনা জানি না, কিন্তু এগুলি আমি ব্যবহার করছি সচেতনভাবে, ‘সংখ্যালঘুতা’ নিয়ে গুরুগম্ভীর একটা আলোচনার সূত্রপাত করব বলে।[১] 

আমরা সবাই জানি, লঘু-গুরু, ক্ষুদ্র-বৃহৎ ইত্যাদি বিপরীতার্থক শব্দগুলির কোনো স্থির মাপকাঠি নেই, বরং সেগুলির অর্থময়তা ও প্রযোজ্যতা নির্ভর করে পরিপ্রেক্ষিতের উপর।

তথাপি বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু’ বলতে যে মূলত ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’দের, বিশেষত হিন্দুদের, বোঝানো হয়ে থাকে, তাও আমরা কমবেশি সবাই জানি। এ কথা মাথায় রেখেই ‘সংখ্যালঘু’ ও ‘সংখ্যাগুরু’ শব্দগুলির প্রচলিত অর্থকে নাড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে এগুলিকে আমি অপ্রত্যাশিতভাবে টেনে এনেছি বাবু দাসের বিপন্নতার বিবরণে।

এক্ষেত্রে আমার মূল উদ্দেশ্য হল সংখ্যালঘুতার ধারণার আড়ালে থাকা সামাজিক ক্ষমতাবিন্যাস তথা রাষ্ট্রের স্বরূপকে সামনে নিয়ে আসা, এবং সেই ক্ষমতাকাঠামোর কিছু ভাষাগত ও বুদ্ধিবৃত্তিক অনুষঙ্গকে শনাক্ত করা।

আমার মাথায় যেসব ভাবনা ঘুরছে, সেগুলি অবশ্য একেবারে নতুন নয়। এসবের কিছু আমি বিভিন্ন আকারে তুলে ধরেছি আমার পূর্বপ্রকাশিত একাধিক লেখায়। অন্যরাও অনেকেই তাঁদের মত করে প্রসঙ্গগুলি উঠিয়েছেন বিভিন্ন জায়গায়।

সেসব সূত্র ধরে সংখ্যালঘুতার ধারণাসহ প্রাসঙ্গিক কিছু বিষয় সামনে আনার উদ্দেশ্যে আমার এই নিবন্ধ, যেখানে আমার নিজের কিছু পুরানো লেখার নির্বাচিত অংশবিশেষ ও সংশ্লিষ্ট লিংকগুলি দেওয়ার পাশাপাশি একটা সংক্ষিপ্ত অনুসন্ধান থেকে টুকে রাখা অন্যদের কিছু লেখার সূত্রও জুড়ে দিচ্ছি। বর্তমান আকারে লেখাটি আমি পেশ করছি পরবর্তীতে পূর্ণতর রূপ দেওয়া যেতে পারে, এমন একটি পর্যালোচনার খসড়া হিসেবে।

collage

সংখ্যালঘু/সংখ্যাগুরু ও ক্ষুদ্র/বৃহৎ বিভাজন নিয়ে আমার নিজের কিছু পূর্বপ্রকাশিত ভাবনা

আমার যেসব পূর্বপ্রকাশিত ভাবনা ও প্রশ্ন নিয়ে আমি নতুন করে ভাবছি, সেগুলির কিছু আমি তুলে ধরেছিলাম পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ! শিরোনামে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর ২৯ তারিখে প্রথম আলোতে প্রকাশিত আমার একটি প্রতিক্রিয়ায়।

এটি প্রকাশের এক সপ্তাহ আগে রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া ‘সাম্প্রদায়িক’ সহিংসতা নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যেভাবে খবর পরিবেশিত হয়েছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম আমি সেই লেখায়:

সম্প্রতি রাঙামাটিতে কী ঘটেছিল? পত্রিকার খবর অনুযায়ী, ‘পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ’। বেশির ভাগ পত্রিকায়ই খবরটি পরিবেশিত হয়েছে গুরুত্বের সঙ্গে। ‘পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ’ কথাগুলো আছে বেশির ভাগ পত্রিকার শিরোনামেই [… এবং একটির বেলায় শিরোনামে না থাকলেও] খবরের বিবরণে। এদিক থেকে প্রথম আলোর শিরোনাম বা বিবরণে যা একটু ভিন্নতা আছে। পত্রিকাটির চোখে ঘটনাটি ছিল ‘বাঙালি-আদিবাসী সংঘর্ষ’। তবে সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, একটা সংঘর্ষ যে ঘটেছিল, যার ভেদরেখা ছিল জাতিগত পরিচয়ের সীমানা, এই ভাষ্যই সব বাংলা পত্রিকার খবরে উঠে এসেছে।

,,,

শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রকে, বা রাজনীতিবিদসহ রাষ্ট্রক্ষমতার সাথে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানদের দোষ দেওয়াই বোধ হয় আর যথেষ্ট নয়। এদেশের মিডিয়া আমাদেরকে সংবাদ শিরোনামের পেছনের বাস্তবতা অনুধাবনে কতটা সহায়তা করছে? নাকি তাদের সংবাদ পরিবেশনার মধ্যেও একই সমস্যা শেকড় গেড়ে ফেলেছে?

হামলাকারী বা আক্রান্তদের পরিচয় নিরূপণের ক্ষেত্রে জাতিগত পরিচয় বা সংখ্যাগুরু-সংখ্যালঘুর প্রচলিত ভেদরেখা ব্যবহার করা যে সমস্যাজনক, তা আমি বলার চেষ্টা করেছিলাম নিচের যুক্তি দিয়ে:

ধরা যাক, রাঙামাটি শহরে পাহাড়ি-বাঙালি মিলিয়ে মোট ৬০,০০০ মানুষ বাস করে। এদের মধ্যে কতজন সহিংসতা চায়, বা জাতিগত ভিন্নতার কারণে আরেকজনের গায়ে চাপাতির কোপ মারতে প্রস্তুত? যারা অপরাধী কর্মকান্ডে সরাসরি লিপ্ত, বা নেপথ্যের মদতদাতা, তাদের সংখ্যা কত হবে: ৬? ৬০? ৬০০? বা বড় জোর ৬০০০? যতই হোক, ৬০,০০০-এর তুলনায় অতি নগণ্য সংখ্যা। তাহলে তাদের আচরণের দায় কেন বাকি সবার উপর চাপানো হবে ‘পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ’ হিসেবে?

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, আমার ওঠানো উপরের প্রশ্নগুলি যেদিন প্রথম আলোতে প্রকাশিত হয়েছিল, ঘটনাচক্রে সেদিন (অর্থাৎ সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১২ তারিখে) রাতেই রামুতে বৌদ্ধ জনপদের উপর হামলার একটা নজিরবিহীন ঘটনা শুরু হয়েছিল, যা পরের দিন অন্যত্রও খানিকটা ছড়িয়ে পড়েছিল।

সেই ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে bdnews24.com-এর Opinion পাতায় অক্টোবর ২, ২০১২ তারিখে প্রকাশিত  The Minorities of Our Nightmares শিরোনামের একটি নিবন্ধেও আমি সংখ্যাগুরু/সংখ্যালঘু (মেজরিটি/মাইনরিট) বিভাজনকে একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছিলাম। আমি লিখেছিলাম,

The incidents like that in Ramu by themselves do not necessarily indicate that the majority of people in Bangladesh condone such acts. In fact, personally I am convinced that in a statistical sense, the criminal elements of society targeting the ethnic or religious minorities constitute minorities themselves. But the question remains, how is it that people belonging to the latter category of ‘minorities’ can dictate terms for the rest of us?

The forces that are invading the dreams and cherished ideals of most decent people in Bangladesh may indeed constitute a minority. But they seem well organized, and ready to pounce whenever the time is ripe, as have been shown on numerous occasions. Moreover, they may enjoy the support of those who made pacts with the devil. Such people too may be minority in numerical terms, but they have money and power on their side. Are we ready to face these merchants of despair and destruction who have leapt out of our nightmares?

যাই হোক, উপরে উল্লেখ করা প্রতিক্রিয়ায় পাহাড়ি/বাঙালি বা সংখ্যাগুরু/সংখ্যালঘু ভেদরেখাকে প্রচলিত অর্থে ব্যবহার করে সংবাদ পরিবেশনের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে যেসব প্রশ্ন আমি উঠিয়েছিলাম, সেসবকে সংশ্লিষ্ট পত্রিকা-সম্পাদকেরা কখনো আমলে নিয়েছেন, এমন কোনো প্রমাণ এযাবত দেখা যায় নি।

বরং যে কাগজে আমার প্রতিক্রিয়াটি ছাপা হয়েছিল, সেই প্রথম আলোই পরে ভিন্ন একটি ঘটনার প্রেক্ষাপটে একটা সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিল রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ শিরোনামে (জানুয়ারি ১২, ২০১৫)!

এখানে উল্লেখ্য যে, যে সময় এই সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিল, তখনো প্রথম আলো পত্রিকায় আদিবাসী শব্দটি ব্যবহৃত হত নিয়মিতভাবে, অর্থাৎ এখন যেমন ‘আদিবাসী’ শব্দের বদলে এই কাগজে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ লেখা হচ্ছে বেশ নিষ্ঠার সাথে, তেমন কোনো প্রবণতা তখন ছিল না।

সেদিক থেকে ২০১২ সালের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে ২০১৫ সালের উল্লিখিত সম্পাদকীয়টির শিরোনামও ‘রাঙামাটিতে পাহাড়ি-আদিবাসী সংঘর্ষ’ হতে পারত। এখন দেখার বিষয়, আগামীতে প্রথম আলো ‘আদিবাসী’র বদলে ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ বসিয়ে একই ধরনের শিরোনাম করবে কিনা, এবং সেক্ষেত্রে ‘বাঙালি’র বদলে ‘বৃহৎ নৃগোষ্ঠী’ লেখে কিনা![২]

আসলে যে যুক্তিতে সংখ্যালঘু/সংখ্যাগুরু বিভাজনের নির্বিচার ব্যবহার সমস্যাজনক, সেই একই যুক্তিতে ক্ষুদ্র/বৃহৎ ভেদরেখার ঢালাও প্রয়োগও আপত্তিকর।

তার উপর যখন আমরা জানতে পারি যে বাংলাদেশে নৃগোষ্ঠী পদটির ব্যবহার শুরু হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে সেকেলে হয়ে যাওয়া ও রাজনৈতিকভাবে সমস্যাজনক বলে বিবেচিত ‘race’ ধারণার প্রতিশব্দ হিসেবে, তখন ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ পদটির গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের নিচে চলে যায়।[৩]  

এখানে যোগ করা যেতে পারে যে প্রথম আলো পত্রিকাতেই ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’র ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে লেখা আইনুন নাহার ও আমার একটা নিবন্ধ ছাপা হয়েছিল ২০১৩ সালের আগস্ট ৬ তারিখে, ক্ষুদ্ররা নগণ্য থাকবে, নাকি অগ্রগণ্য হবে? শিরোনামে। সেখানে যে ধরনের প্রশ্ন আমরা উঠিয়েছিলাম, তার উদাহরণ নিচে তুলে ধরছি:

ক্ষুদ্র বা নগণ্যদের গোনার তোড়জোড় এখন দেশে চলছে। যদিও প্রশ্ন থেকে যায়, যে ধরনের গোনার কাজ হচ্ছে, তা দিয়ে কতটা গোনায় নেওয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের? অভিধানে ‘ক্ষুদ্র’ বলতে বোঝায় ছোট, নীচ, সামান্য, অল্প ইত্যাদি যেগুলোর সমগোত্রীয় হলো ‘নগণ্য’, যার অর্থ গণনার অযোগ্য, তুচ্ছ, সামান্য, উপেক্ষা করার মতো ইত্যাদি।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পদটি সৃষ্টির পেছনে একটা যুক্তি হয়তো বা ছিল এই যে এ নামে অভিহিতরা জনসংখ্যাগতভাবে বাংলাদেশের মানদণ্ডে আসলেই ‘ক্ষুদ্র’। …

প্রশ্ন হচ্ছে, সংখ্যাল্পতা কি জনগণের একাংশকে সরকারিভাবে, সাংবিধানিকভাবে, বিশেষায়িত করার প্রধান মাপকাঠি হতে পারে বা হওয়া উচিত? আর ‘নৃগোষ্ঠী’ মানেই বা কী? এটা কি স্রেফ ‘উপজাতি’ শব্দের বিকল্প, যেভাবে আইন করে ‘উপজাতীয় সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটের’ নাম ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট’ করা হয়েছিল? ‘উপজাতি’র নেতিবাচক ব্যঞ্জনা এড়ানোর লক্ষ্যে যদি ‘নৃগোষ্ঠী’ চালু করা হয়, তাহলে সংবিধানে দুটিকেই পাশাপাশি রেখে দেওয়া হলো কেন?

সেখানে যে ‘জাতিসত্তা’ শব্দটিও রাখা হয়েছে, যার সরকারি ইংরেজি গোলমেলেভাবে করা হয়েছে ‘[মাইনর] রেস’, সেটির কাজ কী? উপজাতি, জাতিসত্তা, নৃগোষ্ঠী—এগুলো কি সমার্থক? এসব মৌলিক প্রশ্নের কোনো উত্তর সংবিধানে নেই এবং সরকারি ব্যাখ্যাও নেই। অথচ এ অবস্থাতেই চলছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের তালিকা প্রণয়নসহ তাদের ওপর জরিপ চালানোর একাধিক উদ্যোগ।

~~~

বলা বাহুল্য, সংখ্যালঘু/সংখ্যাগুরু বা ক্ষুদ্র/বৃহৎ বিভাজনের ঢালাও প্রয়োগসহ প্রাসঙ্গিক আরো কিছু বিষয় নিয়ে যে ধরনের প্রশ্ন আমি তুলে ধরেছি উদাহরণ হিসেবে উপরে উল্লেখ করা আমার কিছু পুরানো লেখার প্রেক্ষিতে, সে ধরনের প্রশ্ন নিয়ে বাংলাদেশে আরো অনেকেই মাথা ঘামিয়েছেন, এখনো ঘামান।

তবে এগুলি নিয়ে ব্যাপক ও গভীরভাবে ভাবেন, এমন লোকের সংখ্যা হয়ত কোনো সমাজেই খুব বেশি নয়। তার উপর যেসব লেখক-গবেষক-বুদ্ধিজীবী-রাজনীতিবিদের যথেষ্ট আগ্রহ আছে এসব বিষয়ে, তাঁদের মধ্যেও আবার চিন্তাধারা ও মতাদর্শের পার্থক্য থাকতে পারে।

তথাপি একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এটা কখনো কাম্য নয় যে, নির্দিষ্ট কিছু মানদন্ডে ‘সংখ্যালঘু’ হিসেব গণ্য হতে পারে, জনগণের এমন কোনো অংশ নির্যাতন-নিপীড়ন-বৈষম্যের শিকার হবে।

এদিক থেকে ‘সংখ্যালঘুতা’র ধারণা, যদি সেটির আদৌ কোনো জায়গা থাকে, কোনো লঘু বিষয় নয়, বরং এমন ধারণার খোপে আটকে যেতে পারে, এমন সকল গোষ্ঠীকে মর্যাদা, অধিকার ও পরিচয়ের দিক থেকে অন্য সবার সাথে একই সমতলে নিয়ে আসা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

এই গুরুভার বাংলাদেশে যাঁরা বহন করছেন, অর্থাৎ যাঁরা সংখ্যালঘুতার ধারণাকে বিনা প্রশ্নে ব্যবহার না করে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তুলছেন, তাঁরা কে কী ভাবছেন? এ বিষয়ে খুব সংক্ষিপ্ত একটা প্রাথমিক অনুসন্ধান আমি চালিয়েছি গুগলের সাহায্যে। সেখান থেকে পাওয়া কিছু প্রতিনিধত্বশীল নমুনা সূত্রসহ তুলে ধরা হল নিচে।

‘সংখ্যালঘুতা’র ধারণাকে অন্যরা যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন

বাংলাদেশে প্রকৃত সংখ্যালঘু কারা? শিরোনামে বদরুদ্দীন উমরের একটা নিবন্ধ বেরিয়েছিল যুগান্তর পত্রিকায়, ৫ জুন, ২০১৬ তারিখে। লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর ফেসবুকের মাধ্যমে এটি আমার নজরে এসেছিল, তবে তখন শিরোনাম ছাড়া ভেতরের আলোচনা পড়ে দেখি নি। এই লেখায় হাত দেওয়ার পর উমরের লেখাটি পড়তে গিয়ে সেখানে তাঁর যে দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় পেয়েছি, তা আমাকে কিছুটা হতাশ করেছে।

বাংলাদেশে ‘সংখ্যালঘু’ বলতে যে মূলত হিন্দুদের বোঝানো হয়, তা নিয়ে তাঁর প্রশ্নটা যুক্তিসঙ্গত বটে, কিন্তু যেভাবে তিনি ‘প্রকৃত সংখ্যালঘু’র ধারণা ব্যবহার করেছেন, এবং এর সীমানাকে বেঁধে দিতে চেয়েছেন, তা নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয়।

বিশেষ করে বাংলাদেশের হিন্দুদের নির্যাতিত হওয়ার চিত্রটি অনেকটাই ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের তৈরি, এবং এদেশে হিন্দুদের অনেকেই সুবিধাজনক অবস্থায় আছে, এমন কথা বলার মাধ্যমে তিনি যেভাবে নিজের প্রশ্নের একটা খন্ডিত উত্তর দাঁড় করাতে চেয়েছেন, তা আমার কাছে সমস্যাজনক মনে হয়েছে। যাহোক, তাঁর মূল বক্তব্য মোটামুটি ফুটে ওঠে নিচের উদ্ধৃতিতে:

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বলতে বোঝায় শুধু হিন্দুদের এবং সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে নির্যাতন বলতে বোঝায় হিন্দুদের ওপর নির্যাতন! এর থেকে সত্যের বড় অপলাপ আর কী হতে পারে? এই অসত্য ও মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আজ স্পষ্টভাবে প্রকৃত সংখ্যালঘু সমস্যাকে সামনে আনা দরকার, যে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুরা নয়।

তারা হলেন জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘু, বিশেষত সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা … বাংলাদেশের প্রায় ৪৫টি সংখ্যালঘু অবাঙালি জাতি।

বাংলাদেশের ৪৫টির মত ‘সংখ্যালঘু অবাঙালি জাতি’দের সমস্যাকে সামনে আনতে গিয়ে বদরুদ্দিন উমর যেভাবে হিন্দুদের সংকটকে খাটো করে তুলে ধরতে চেয়েছেন, তা নিয়ে স্বভাবতই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

অনেকে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। যেমন, ১৪ জুন ২০১৬ তারিখে জাগরণীয়া-তে প্রকাশিত কমরেড বদরুদ্দীন উমর এবং সংখ্যালঘু প্রসঙ্গ শিরোনামের প্রতিক্রিয়ায় ফাহিমা কানিজ লাভা লিখেছেন, “কমরেড উমর জোর দিয়ে যে কথাটি বলতে চেয়েছেন তা হল, হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক কোনো নির্যাতনই নাকি এদেশে হচ্ছে না। বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় সব সম্প্রদায় নির্বিশেষে এমন নির্যাতন চলছে বলে তিনি মনে করছেন।” একইভাবে উমরের বক্তব্যের বিপরীতে লেখা আরেকটি প্রতিক্রিয়া হল জুন ১৩, ২০১৬ তারিখে ‘আমরা বন্ধু’ ব্লগে প্রকাশিত সংখ্যালঘুত্ব, যেটির লেখক রাসেল মূল প্রশ্নের একটা সার্বিক উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নিজের মত করে:

ক্ষমতাবানদের হাতে ক্ষমতাহীনদের নিপীড়নের মাত্রা কি আক্রান্তের ধর্ম, গোত্র ও জাতিগত পরিচয়ের উপর নির্ভর করে? প্রতিটি ব্যক্তিগত দুর্ভোগকে পরিসংখ্যানে বদলে ফেললে দেখা যাবে প্রতি হাজার মুসলমান জনগণের ভেতরে যতজন নিপীড়িত হচ্ছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন, প্রতি হাজার হিন্দু জনগোষ্ঠী হয়তো তার তুলনায় সামান্য বেশী নির্যাতিত নিপীড়িত হচ্ছেন কিন্তু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর নিপীড়নের সংখ্যা টালি করলে দেখা যাবে নিপীড়িত বিবেচনায় হাজারকরায় আদিবাসী জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী নিপীড়িত জনগোষ্ঠী।

~~~

বাংলাদেশের জনগণের সামষ্টিক পরিচয় কী হবে (বাঙালি/বাংলাদেশি), জাতিগতভাবে যারা নিজেদের বাঙালি মনে করে না, নতুন রাষ্ট্রের পরিচিতি নির্মাণে তাদের জায়গা কী হবে, এসব প্রশ্ন এদেশের জন্মলগ্ন থেকেই ছিল।

সংবিধান প্রণয়নের সময় ১৯৭২ সালে মানবেন্দ্র লারমার নিঃসঙ্গ প্রতিবাদী কন্ঠ কিভাবে উপেক্ষিত হয়েছিল, সে ইতিহাস কমবেশি সবাই জানেন। সেটির পুনরাবৃত্তিতে না গিয়ে ‘সংখ্যালঘুতা’র প্রশ্নে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা তাজউদ্দীন আহমদের চিন্তা হিসেবে তুলে ধরা একটা বিবরণ একটু দেখে নেব।

এ প্রসঙ্গে সংখ্যালঘু কারা শিরোনামে bdnews24.com-এর মতামত পাতায় ১৬ নভেম্বর, ২০১৩ প্রকাশিত শারমিন আহমেদের লেখাতে যে আলোচনা রয়েছে, সেখান থেকে নিচে কিছু অংশ তুলে ধরা হল:

[তাজউদ্দীন আহমদ] সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে বাংলাদেশে ধর্মের ভিত্তিতে কেউ সংখ্যালঘু হিসেবে চিহ্নিত হবে না। সংখ্যালঘু হবেন সেই ব্যক্তি বা দল যিনি নির্বাচনে ভোট কম পেয়েছেন। … গণতন্ত্র বলতে তিনি সত্যিকারের আইনের শাসনের ওপর প্রতিষ্ঠিত, জনগণের জান-মাল ও অধিকার সংরক্ষণকারী রাষ্ট্রব্যবস্থার কথাই বলেছিলেন। সেই ব্যবস্থাটি যখন দুর্বল হয়ে যায় তখন তার খেসারত বিশেষ করে দিতে হয় সেই নাগরিকবৃন্দকে যারা ধর্ম ও জাতির ভিত্তিতে সংখ্যালঘু।

তাঁর লেখার শেষ দিকে ‘সংখ্যালঘু কারা’ প্রশ্নে নিজের মতামত তুলে ধরতে গিয়ে শারমিন আহমেদ একবার সিলেটে একটি খাসিয়া পল্লীতে গিয়ে লব্ধ তাঁর একটা অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন এভাবে:

খাসিয়ারা যে জায়গায় থাকেন সেখানে ঢোকার কোনো রাস্তা ছিল না। একটি নালার ওপর মরা গাছের গুঁড়ি ফেলে কোনোমতে চলাচল করা হয়। সেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি। সরকারি কোনো স্কুলও নেই তাদের জন্য। সেখানে যেয়ে তাদের উন্নত চিন্তা ও আচরণের সঙ্গে পরিচিত হয়ে শ্রদ্ধাবনত হয়েছিলাম।

তারা কঠোর পরিশ্রমী। অত্যন্ত পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন। দলাদলি করেন না। মিথ্যা বলেন না। মানুষকে ঠকান না। …

এই উপজাতিদের মতো মহৎ চিন্তাকর্মের মানুষেরা কি জাতিধর্মের ভিত্তিতে সংখ্যালঘু হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে? এই চিন্তাটি সেদিন মনে উদয় হয়েছিল।

শারমিন আহমেদের বিবরণে খাসিয়াদের সম্পর্কে অতিসরলীকৃত যে চিত্র ফুটে উঠেছে, এবং ‘উপজাতি’র মত ঔপনিবেশিক ধারণাকে তিনি যেভাবে বিনাপ্রশ্নে ব্যবহার করেছেন, তাতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গীর স্বচ্ছতা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়, তবে ‘সংখ্যালঘুতা’র ধারণা যে স্থির ও শিরোধার্য কোনো বিষয় নয়, বরং এর যথেচ্ছ ব্যবহার যে পরিত্যাজ্য, তা তিনি ঠিকভাবেই তুলে ধরেছেন।

সংখ্যালঘুতার ধারণাকে নিয়ে অন্যদের চিন্তাভাবনা সম্পর্কে একটুখানি খোঁজ নেওয়ার পর আমি দেখেছি, এ নিয়ে আমার নিজের লেখালেখিতে যে ধরনের প্রশ্ন আমি উঠিয়েছি, সেগুলি অন্যরাও তুলেছেন, তুলে চলছেন, নিজেদের মত করে।

যেমন, সোনেলা ব্লগে জানুয়ারি ৭, ২০১৪ তারিখে প্রকাশিত আসলে কারা সংখ্যালঘু? শিরোনামের একটি লেখায় ফাহিমা কানিজ লাভা লিখেছেন, “আমরা বলছি ‘সংখ্যালঘু’-দের ওপর নির্যাতন হচ্ছে, আসলে কারা সংখ্যালঘু? যারা আমার মতো এসব দেখে কষ্ট পাচ্ছেন, তাদের সংখ্যাই কি বেশি না এসব নির্যাতনকারীদের চেয়ে? তাহলে এই নরপিশাচ সংখ্যালঘু যারা অমুসলিমদের ঘরে আগুন দিচ্ছে, পথে বসাচ্ছে আমার ভাই-বোনদের, তারাই কি সংখ্যালঘু না?”

একই প্রসঙ্গে মুক্তাঙ্গন ব্লগে  ৬ সেপ্টেম্বর ২০০৮ প্রকাশিত কাফকা, দীপায়ন ও আমি : প্রসঙ্গ সংখ্যালঘুত্ব শিরোনামের একটি পোস্টে জাকির তালুকদার নিজের মতামত দিয়েছেন একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে:

লেখক, যদি তিনি হন চিন্তায় অগ্রগামী, অপ্রথানুগ, তাহলে নিশ্চিতই তিনি পড়ে যান সংখ্যালঘুদের দলে। এ তো লেখকের স্বনির্মিত এক ভাগ্যনিয়তি। মানসিক সংখ্যালঘুত্ব তাঁকে কোনো এক সময়ে পরিণত করে ফেলতে পারে নিঃসঙ্গ এককে। তিনি তখন স্বয়ম্ভূ কিন্তু নিঃসঙ্গ। এমন প্রাপ্তি এবং প্রাপ্তির অভিশাপ একই সঙ্গে বহন করার ভাগ্য লেখক ছাড়া আর কারো হয় বলে আমাদের জানা নেই।

আমাদের গুরুভার

উপরের পর্যালোচনা থেকে এই উপসংহার আমরা টানতে পারি যে, সংখ্যালঘু/সংখ্যাগুরু বা ক্ষুদ্র/বৃহৎ বিভাজন (এবং তৎসংশ্লিষ্ট কিছু গোলমেলে ধারণা যেমন ‘উপজাতি’, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’) পরিহার করে দেশের জনগণের সবাইকে ধারণাগতভাবে একই পাটাতনে নিয়ে আসতে পারে, এমন একটি বুদ্ধিবৃত্তিক ও ভাষিক পরিসর নির্মাণের কাজ বাংলাদেশে এখনো অসমাপ্ত রয়ে গেছে।

তবে এ কাজে নিজেদের মত করে নিয়োজিত রয়েছেন, এমন সমমনা অনেক ব্যক্তিও রয়েছেন আমাদের চারপাশে। সংখ্যায় যতই ক্ষুদ্র বা লঘু হোক, এই গুরুদায়িত্ব বহনের কাজটি তাঁরা নিশ্চয় করে যাবেন।

তবে তাঁরা যদি সবাই মিলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে এবং নিজেদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ, আলাপ ও বিতর্কের মাধ্যমে এই কাজটি চালিয়ে যান, তাহলে তা নিশ্চয় একসময় একটা সুষ্ঠু পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে।

গণতন্ত্রের একটি অর্থ করা হয় এই বলে যে, এটি এমন একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে সংখ্যাগুরুর মতামত প্রাধান্য পায়। অনেকে তুচ্ছার্থে বলে থাকেন, এটি আসলে এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে শতকরা একান্ন ভাগ মানুষ বাকি উনপঞ্চাশ ভাগের অধিকার কেড়ে নিতে পারে।[৪] 

যাইহোক, বর্তমান বিশ্বে মোটামুটিভাবে সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই ‘সংখ্যাগুরু’র মতামতের ভিত্তিতেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচন তথা সরকার গঠনের রেওয়াজ প্রচলিত আছে। বাস্তবে অনেক দেশে যে জনগণের একটা বড় অংশ আদৌ ভোটই দেয় না, বা অনেকক্ষেত্রে নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয় না, সে আলোচনায় আমরা যাচ্ছি না।

আমরা যদি ধরেও নেই যে একটি দেশের নির্বাচিত সরকার জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের ভোটেই ক্ষমতায় এসেছে, তথাপি একথা সবাই মানি যে, গণতন্ত্র মানেই শুধু চার-পাঁচ বছর পর ভোটাভুটি নয়।

তাছাড়া ভোটাভুটির ক্ষেত্রে ‘সংখ্যাগুরু’ বলতে যা বোঝায়, সেটির ভিত্তিতে জনগণকে স্থায়ীভাবে ‘সংখ্যাগুরু’ বা ‘সংখ্যালঘু’ হিসেবে বিভাজিত করা সম্ভব নয়, বা সেটা সম্ভব হলেও তা করা নানাভাবেই সমস্যাজনক।

বরং দল-মত-জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অধিকার সমুন্নত রেখেই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, এটিই সাধারণভাবে প্রত্যাশিত।

বিশেষ করে বিভিন্ন বিচারে সংখ্যায় যারা কম, তাদের মৌলিক অধিকার যেন কোনোভাবে ক্ষুন্ন না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রেখে আইন তথা সংবিধানের আওতায় ক্ষমতা প্রয়োগ করা সরকারের একটি কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। তবে যখন জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে প্রশ্ন বা বিতর্ক ওঠে, তখন জনগণের ‘সংখ্যাগুরু’ অংশের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি লক্ষ্য রেখে এবং আইন তথা রাষ্ট্রের সংবিধানের আওতায় সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, তাও প্রত্যাশিত।

আর এক্ষেত্রে জনগণের কোনো অংশের, তাদের সংখ্যা যাই হোক না কেন, মৌলিক অধিকার যেন কোনোভাবে লংঘিত না হয়, সেদিকেও সমান নজর দেওয়া সরকারের কর্তব্য হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে আমাদের সামনে পরীক্ষাক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে, এমন দু’টি প্রেক্ষাপটের উদাহরণ নিচে উল্লেখ করছি।

প্রথম উদাহরণটি হল রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের একটি চলমান সরকারি উদ্যোগ, যা নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক বিতর্ক দেখা দিয়েছে। অন্যটি হল খাগড়াছড়িতে আলুটিলা পাহাড় সংলগ্ন একটি ‘বিশেষ পর্যটন এলাকা’ স্থাপনের সরকারি পরিকল্পনা, যেটির ব্যাপারে স্থানীয় জনগণের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো শুরু হয়েছে।

রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হলে সুন্দরবন বিপন্ন হবে, এই আশঙ্কায় বাংলাদেশের একটা সচেতন মহল দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ এবং আন্দোলন চালিয়ে আসছেন।  কিন্তু ইতোমধ্যে সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে যাবে।

এই অবস্থায় সংখ্যার বিচারে জনগণের কতভাগ কী চায়, সেই প্রশ্নের চাইতেও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে ‘সংখ্যায় লঘু’ কিন্তু অত্যন্ত ক্ষমতাধর কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী কী চায়।

সুন্দরবন বাঁচানোর আন্দোলনে গোটা দেশের সচেতন জনগণের একটা ক্রমবর্ধন অংশ সরব ও তৎপরভাবে শামিল হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতার কেন্দ্রকে এখন পর্যন্ত খুব একটা টলানো যায় নি পূর্বপরিকল্পিত পথ থেকে।

এই প্রেক্ষাপটে যখন তুলনামূলক বিচারে জনগণের একটি দুর্বলতর ও ক্ষুদ্রতর অংশকে দেখা যায় কোনো আন্দোলনে নামতে (উদাহরণ খাগড়াছড়িতে শুরু হওয়া ‘আলুটিলা বাঁচাও’ আন্দোলন),  সেটির পরিণতি নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।

তবে যখন আমরা উপলব্ধি করি যে সারাদেশেই জনগণের বহু অংশ নানাভাবে প্রান্তিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে – চা শ্রমিক, গার্মেন্টস কর্মী, কৃষক, বস্তিবাসী, নারী, আদিবাসী ইত্যাদি বহু পরিচয়ে বিভক্ত থেকে – তখন আমাদের সামনে একটা সম্ভাব্য কৌশল হিসেবে হাজির হয় এ ধরনের বিবিধ আন্দোলনকে একটা বৃহত্তর ধারায় নিয়ে আসা।

সেটিকে বাস্তব রূপ দিতে গেলে বিদ্যমান বিবিধ পরিচয়ের কোনোটিকে নাকচ না করে সেগুলির বহুমুখী আন্তঃসম্পর্ককে যথাযথভাবে বুঝতে হবে, এগুলির ভিত্তিতে নতুন ও গতিশীল মিথষ্ক্রিয়ার ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে, সেগুলিকে  প্রতিফলিতে করতে হবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। এ প্রসঙ্গে ২০১৩ সালের ২৯শে সেপ্টেম্বর bdnews24.com-এর মতামত বিভাগে প্রকাশিত রামু, রামপাল ও জাতীয় স্বার্থের সীমান্ত শিরোনামের একটি লেখা থেকে নিজের কিছু ভাবনা আবার তুলে ধরছি এখানে:

রামু আর রামপাল উভয় জায়গাই সীমান্ত-সংলগ্ন এবং একভাবে উভয়ই হয়ে উঠেছে জাতীয় স্বার্থের বিপন্ন সীমান্তের প্রতীক। রামপাল যেমন হয়ে উঠেছে হুমকির মুখে পড়া অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতীক, তেমনি একটু খেয়াল করলেই বোঝা যায়, রামুতে যেসব বিষয় আক্রান্ত হয়েছিল, ধূলিসাৎ হয়েছিল– বিরল সাংস্কৃতিক নিদর্শন ও অসাম্প্রদায়িকতার স্থানীয় ঐতিহ্য-– সেসবও ছিল অমূল্য জাতীয় সম্পদ।

জাতীয় স্বার্থের এ অভিন্ন যোগসূত্রটা যারা দেখতে পান, তাদের কাছে রামু এবং রামপাল উভয় জায়গাই তাই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের একেকটা সীমান্ত ঘাঁটি।

আমি ‘জাতীয় স্বার্থের সীমান্ত’ ধারণাটার উপর আলোকপাত করব প্রাসঙ্গিক একটা বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে, যা এ ধরনের প্রেক্ষিতে সচরাচর নজরের আড়ালে থেকে যায়। দৃষ্টিকোণটা হচ্ছে এদেশে যারা ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের দাবিদার, সেই ‘জাতিগত সংখ্যালঘু’দের।

এক বছর আগে রামুতে যে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে বড়ুয়া ও রাখাইন-– এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন। বড়ুয়াদের সংখ্যাই বেশি ছিল এবং তাদের বর্তমান জাতিগত পরিচয় যেহেতু বাঙালি (অতীতে একসময় তাদেরকে ‘মগ’ বর্গভুক্ত হিসাবেও দেখা হত)– রামুর সহিংসতাকে অনেকে দেখেছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের ‘অসাম্প্রদায়িক’ আদর্শের প্রতি একটা আঘাত হিসাবে। বিশেষ করে শান্তিপ্রিয় ও নির্বিরোধ বলে বড়ুয়াদের একটা পরিচিতি গড়ে উঠেছে। কাজেই বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের অনেকের কাছেই রামুর সহিংসতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো ছিল না।

তবে রামুর ঘটনার বাঙালি-কেন্দ্রিক ভাষ্যের কিছু অনুচ্চারিত দিক যে গোলমেলে ছিল, তা অনেকে হয়তো খেয়ালই করেননি। যেমন, প্রথমত, এতে রাখাইনরা চলে গিয়েছিল দৃষ্টির আড়ালে।

দ্বিতীয়ত, ‘বড়ুয়াদের মতো শান্তিপ্রিয় সম্প্রদায়ের উপর আঘাত বরদাশ্‌ত করা যায় না’-– এমন কথার পেছনে প্রচ্ছন্নভাবে বুঝি-বা এটা বলা হচ্ছে যে, ‘পাহাড়িদের উপর হামলার পেছনে কিছু যুক্তি আছে’! (উল্লেখ্য, রামুর সহিংসতার ঠিক এক সপ্তাহ আগে রাঙামাটিতে পাহাড়িদের উপর আক্রমণ পরিচালিত হয়েছিল, যে ঘটনাকে তখন বেশিরভাগ পত্রপত্রিকায় ‘পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষ’ হিসাবে প্রচার করা হয়েছিল!)

উপরের উদ্ধৃতিতে একটা আভাস রয়েছে, ‘জাতীয় স্বার্থে’র ধারণাকে আমাদের আরো স্পষ্ট করতে হবে এর সর্বোচ্চ বিস্তৃতিকে আমলে নিয়ে, এবং সেটিকে সুরক্ষিত করতে হবে বিভিন্ন ‘সীমান্ত ঘাঁটি’র প্রতি সমান নজর দিয়ে।

এক্ষেত্রে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন আলুটিলা এলাকার মত প্রত্যন্ত জনপদকেও প্রতিরোধের একটি সম্ভাব্য ঘাঁটি হিসেবে তুলে ধরতে হবে সমমনা সবার কাছে, যে কাজটা আমি করার চেষ্টা করেছি আলুটিলা, মাটিরাঙ্গা: আমার মনোভূমির একটা সীমান্ত শিরোনামের একটি লেখায়। একই সাথে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে প্রান্তিকদের মধ্যেও যারা প্রান্তিকতম ও দুর্বলতম, তাদের অধিকারের প্রশ্ন যেন সবসময় কেন্দ্রে থাকে, যথাযথ গুরুত্ব পায়। কেন এভাবে ভাবতে হবে, কাজ করতে হবে, এই প্রশ্নের একটি উত্তর আমি দেওয়ার চেষ্টা করেছি সুজাতা বা সাগরীর জন্য ন্যায়বিচারের দাবি কেন আপনার ও আমার লড়াইয়েরও অংশ শিরোনামের লেখায়।

পুনশ্চবাবু দাস প্রসঙ্গ

যে বাবু দাসের বিপন্নতার কাহিনী থেকে এই লেখাটির সূত্রপাত ঘটেছে, তাঁর প্রসঙ্গ আমরা আরেকবার বিবেচনায় নেব এই লেখার ইতি টানার আগে। বাবু দাস সনাতন ধর্মাবলম্বী নন বটে, কিন্তু প্রচলিত অর্থে তিনিও ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’ বর্গভুক্ত হতে পারেন, কারণ তিনি একজন খ্রিস্টান।

এই প্রেক্ষিতে তাঁর জমি যারা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে, তারা তাঁর জ্ঞাতিভাই না হয়ে যদি প্রচলিত অর্থে ‘সংখ্যাগুরু’ বর্গের এক বা একাধিক সদস্য হত, সেক্ষেত্রে বাবু দাসের বিপন্নতার খবর ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাবু দাসের জমি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে একটি মহল’ গোছের কোনো শিরোনামে প্রচারিত হলে তা কতটা যথার্থ হবে? এ ধরনের সকল ক্ষেত্রে লঘু-গুরুর প্রচলিত ছকের বাইরে গিয়ে আমাদেরকে বুঝতে হবে ক্ষমতাবিন্যাস তথা রাষ্ট্রের বর্তমান রূপকে।

বিদ্যমান ক্ষমতা কাঠামোয় বাবু দাসদের মত ব্যক্তির সুবিচার পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। বাবু দাসের বদলে যদি ভূমিদস্যুদের লোভাতুর দৃষ্টির সামনে পড়া সুজাতা দ্রং নামের কোনো দরিদ্র বিধবা গারো নারী থাকতেন আমাদের আলোচনার কেন্দ্রে, সেক্ষেত্রে তাঁর বিপন্নতার বহুমাত্রিকতা কতটা আমলে নিতে হত আমাদের? এসব প্রশ্নের কোনো ছকে বাঁধা উত্তর নেই, বরং সুনির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট ধরে স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ সেরে আমাদেরকে একটা সিদ্ধান্তে আসতে হবে, নিতে হবে পরিকল্পনা।

আর এসব ক্ষেত্রে আমরা যারা বাবু দাস বা সুজাতা দ্রং বা অন্য যে কোনো বিপন্ন-আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই, আমাদের তা করতে হবে আমরা সবাই নানাভাবে বিপন্ন, এই উপলব্ধির আলোকে।

সেক্ষেত্রে আমরা যে যাই হই না কেন, আমরা একে অপরকে মনে করিয়ে দেব একজন বিপন্ন কিন্তু আত্মমর্যাদাসচেতন ব্যক্তি কিভাবে অন্যদের সহায়তা আশা করে। সম্ভাব্য সহায়তাকারী সে বলতে পারে, “তুমি যদি ভেবে থাক, তুমি আমাকে উদ্ধার করতে এসেছ, তাহলে তুমি অযথা নিজের সময় নষ্ট করছ, কারণ তোমাকে আমার দরকার নেই। আর তুমি যদি মনে কর, আমার মুক্তির সাথে জড়িয়ে আছে তোমার নিজেরও মুক্তি, তাহলে চল, আমরা একসাথে কাজ করি।”[৫]

টীকা

[১]বাবু দাসের বিপন্নতার বিবরণের আড়ালে সংখ্যালঘুতার ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চিন্তাটি আমি নিজেই একটা ‘লঘু’ ফেসবুক স্ট্যাটাস আকারে লিখতে বসেছিলাম শুরুতে, তবে পরে মনে হল, বাবু দাসের ব্যক্তিগত সংকট বা সংখ্যালঘুতার প্রসঙ্গ ঠিক লঘুভাবে তুলে ধরার কোনো বিষয় নয়।

এদিকে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে রাঙামাটি ও রামুতে ঘটে যাওয়া ‘সাম্প্রদায়িক’ সহিংসতার প্রেক্ষাপটে লেখা আমার কিছু পুরানো নিবন্ধে নতুন করে চোখ বুলাতে গিয়ে মনে হচ্ছিল, সেগুলিতে ওঠানো অনেক প্রশ্ন এখনো প্রাসঙ্গিক।

কিন্তু আগের লেখাগুলোকে বিচ্ছিন্নভাবে পাঠকদের নজরে না এনে সেগুলির সূত্র এক জায়গায় উল্লেখ করে দরকারি কিছু আলোচনাকে আমি খানিকটা এগিয়ে নিতে পারি। সেই চিন্তা থেকেই এই লেখা।

[২] উল্লেখ্য, বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনীর সাথে গোলাগুলিতে পাঁচ আদিবাসী নিহত শিরোনামে আগস্ট ১৬, ২০১৫ তারিখে একটি খবর পরিবেশন করার পর বেশ ঝামেলায় পড়েছিল প্রথম আলো, যার ফলশ্রুতিতে কাগজটিতে ‘আদিবাসী’ শব্দের বদলে ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী’ পদের ব্যাপক ব্যবহার দেখা যেতে থাকে।

যে ঘটনার শিরোনামের জের ধরে এই দিকবদল ঘটেছিল, ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও সে ধরনের প্রেক্ষাপটে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারের পক্ষপাতী নই। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারি মহলের আপত্তির পেছনে যে কারণ থাকতে পারে, তার সাথে আমার যুক্তি মিলবে না।

বিষয়টা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গেলে অনেক কথা বলতে হয় – যার সুযোগ বা প্রয়োজন এই মুহূর্তে নেই, পরে অন্য কোনো পরিসরে তা করা যাবে – তবে ‘আদিবাসী’ ধারণা নিয়ে আমার যেসব লেখা রয়েছে (যেগুলির বেশ কয়েকটি আমার বহুজাতির বাংলাদেশ গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে), সেগুলির মধ্যেই প্রচ্ছন্নভাবে রয়েছে আমার যুক্তি।

[৩] এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে আমার বহুজাতির বাংলাদেশ: স্বরূপ অন্বেষণ ও অস্বীকৃতির ইতিহাস (২০১৫ সালে সংবেদ কর্তৃক প্রকাশিত) গ্রন্থে সংকলিত ‘জাতির কী রূপ’ প্রবন্ধে (বিশেষ করে পৃষ্ঠা ১৭-২০-এর আলোচনা দেখুন)।

উল্লেখ্য, ‘race’ অর্থে ‘নৃগোষ্ঠী’ শব্দটির প্রয়োগ বিষয়ক যে সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে, তা হচ্ছে অজয় রায় লিখিত একটি প্রবন্ধ। তবে উক্ত গ্রন্থের ৫ নং টীকায় এই লেখকের যে পেশাগত পরিচয় দেওয়া হয়েছে, তা সম্ভবত ভুল। একই নামে দুইজন সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব থাকাতে এই ভুল হয়েছে, যা অন্যরাও করে থাকতে পারেন।

[৪] অনেক সময় টমাস জেফারসনের উক্তি হিসেবে উল্লিখিত কথাটির একটি ইংরেজি ভাষ্য হচ্ছে এরকম: “A democracy is nothing more than mob rule, where 51 percent of the people may take away the rights of the other 49.” তবে একটি সূত্র বলছে, জেফারসন যে সত্যিই এমন কোনো কথা কখনো বলেছিলেন বা লিখেছিলেন, তেমন কোনো প্রমাণ নাকি নেই।

[৫] উদ্ধৃতিটি নেওয়া হয়েছে সুজাতা বা সাগরীর জন্য ন্যায়বিচারের দাবি কেন আপনার ও আমার লড়াইয়েরও অংশ লেখা থেকে।

লেখক : প্রশান্ত ত্রিপুরা

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা