সাঁওতাল লোককথা: যখন খরগোশ খেত বাঘকে

Jumjournal
Last updated Mar 23rd, 2020

998

featured image

সে যুগের নামটা বলা শক্ত। কতদিন আগে যে ছিল যুগটা, তাও কেউ জানে না। তবে এটা সত্যি, সে-সময় খররগোশে খেত বাঘকে।

তা খরগোশে যে যুগে বাঘকে খেত, সেই যুগে এক গাঁয়ে ছিল এক কামার। কামার তার উনুনের আঁচের জন্য কাঠকয়লা তৈরি করতে যেত বনে। সেদিনও গেছে তাই। আর তখনই ঘটল ব্যাপারটা।

কামার তার কুড়ুল দিয়ে গাছ কাটছে কাঠকয়লা তৈরি করবে বলে। এমন সময় একটি বাঘ প্রাণের ভয়ে ছুটতে ছুটতে তার দু’পায়ের ফঁকে ঢুকে পড়ে। কামার দেখে বাঘকে তাড়া করেছে আর একটা খরগোশ।

বাঘটা রয়েছে কামারের পায়ের ফাঁকে লুকিয়ে। খরগোশটা এসে তাকে দেখতে পায় না। ভীষণ রেগে গেছে খরগোশ তাই সে কামার আর বাঘকে ছেড়ে এগিয়ে যায় আরো সামনে।

বাঘটা ততক্ষণে কামারকে বলে, দয়া করে আমাকে লুকিয়ে রাখো। ওই পাজী খরগোশটা দেখতে পেলেই মেরে ফেলবে আমাকে। কী কথা বলছ না কেন, তুমি আমাকে বাঁচাবে না?

কামার বলে, কখখনো নয়। আমি তোমায় বাঁচাই আর তুমি আমাকে খেয়ে ফেলো। না, না, আমি তোমাকে লুকিয়ে রাখতে পারব না।

বেশ তোমাকে বিশ্বাস করলাম। বিশ্বাস করেই লুকিয়ে রাখছি তোমাকে। তুমি কিন্তু কথা রেখো।

নিশ্চয়ই তোমাকে খাব না। তবে তুমি কিন্তু এ ঘটনার কথা বলতে পারবে না কাউকে। তুমি যদি বলে দাও তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে খাব।

কামার বলে, না না, আমি কাউকে বলব না ব্যাপারটা। বাঘ বলে, আমিও তাহলে খাব না তোমাকে।

বাঘ আর কামার যখন এসব কথা বলছে, সেই সময়ই খরগোশটা আবার আসে। কামার সঙ্গে সঙ্গে লুকিয়ে ফেলে বাঘকে আর কুড়ালটা ছুড়ে মারে খরগোশকে। এক আঘাতেই খরগোশ শেষ।

বাঘের ধড়ে যেন প্রাণ ফিরে আসে। সে এবার বেশ জোর পায়, এগিয়ে যায় বনের দিকে। যাবার আগে বলে যায়, মনে থাকে যেন, কাউকে কথাটা বললেই খেয়ে ফেলব তোমায় !

কামার কাঠ থেকে কাঠকয়লা করে সেই খরগোশটাকে কাঁধে ফেলে ঘরে ফেরে দুপুর নাগাদ। কামারের বউ সেই খরগোশটাকে কেটেকুটে সুন্দর করে রান্না করে। তারপর কামার আর বউ খেতে বসে ভাত আর মাংস।

মাংস মুখে দিয়ে কামারের বউয়ের ভারি আনন্দ। এমন ভাল মাংস সে বহুদিন খায়নি। কামারবউ তাই জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁগো, এমন খরগোশ তুমি কোথায় পেলে?

কামার কিন্তু কিছু বলে না। সে জানে, বললেই বাঘে তাকে খেয়ে ফেলবে। কামারকে চুপচাপ থাকতে দেখে তার বউ বলে, বল না, কোথায় শিকার করলে খরগোশটা।

ভারি সুন্দর এটার মাংস। কালকে বরং আমিও তোমার সঙ্গে চলে যাব। আমি কাঠ কাটবো আর সেই ফাঁকে তুমি খরগোশ মারবে কেমন ?

কামার এবার বলে, দেখ, তোমাকে একটা গোপন কথা বলছি। কাউকে বলো না যেন কথাটা।

কামারবউ বলে, তোমার মাথা খারাপ হয়েছে। বারণ করেছ যখন, তখন কাউকে আমি বলব ভেবেছ ।

শোন তবে, আজ একটা ভারি মজার ব্যাপার ঘটেছে। এই বলে কামার বলে, একটা বাঘকে তাড়া করেছিল খরগোশটা। বাঘটা তাকে লুকিয়ে রাখতে বললে সে তাই রাখে আর কুড়লটা ছুড়ে খরগোশটাকে মারতেই সেটা মরে যায়।

বাঘ কিন্তু বলেছে, ঘটনাটা কাউকে বললেই খেয়ে ফেলবে সে আমাকে। তাই বলছি, খুব গোপনে রেখ কথাটা।

এখন হয়েছে কি, কামার যখন তার বউকে বলছে কথাটা, সেই সময়ই বাঘটা এসে লুকিয়ে ছিল তাদের বাড়ির কানাচে। শুনেও ফেলে সে সব কথা। তারপর মনে মনেই ‘হুম’ বলে বসে থাকে সেখানেই।

রাত্রি হয়। কামার কামার-বউ ঘুমিয়ে পড়ে। আর বাঘও ঘরে ঢুকে টুক করে কামারকে মুখে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। এমনভাবে বাঘটা কামারকে ধরেছিল যে তার গায়ে এতটুকু আঘাত লাগে না।

অনেকটা এসে জঙ্গলের মধ্যে বাঘটা কামারকে নামায়। ভয়ে কামারতো ভীষণ কাপছে। বিশেষ করে তার পেছন দিকটা কাঁপতে থাকে খুব।

বাঘ কিন্তু তা দেখে অবাক সে বলে, এই, তোমার পেছন দিকটা অত কাঁপছে কেন?
কামারের মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। সে বলে, আমি তো খরগোশটাকে পেটের মধ্যে চালান করেছি।

এখন খরগোশটা আমার পেছন দিক থেকে বেরিয়ে আসূতে চাইছে, তাই এমন কঁপছে।
খরগোশের নাম শুনেই ভয় পায় বাঘ। বলে, তুমি এখ্খুনি ওটাকে ছেড় না যেন। আমি দুরে চলে যাই তারপর তুমি ছেড়।

কামার বলে, তুমি তাহলে শিগগির পালাও। ওটা বেরুল বলে। সঙ্গে সঙ্গে কামারকে ফেলে রেখে ছুট লাগায় বাঘ বনের দিকে। আর কামারও হাসতে হাসতে ফিরে আসে ঘরে।

লেখক : নন্দলাল শর্মা

তথ্যসূত্র : সাওতাল রূপকথা

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা