সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ আঞ্চলিক পরিষদে তঞ্চঙ্গ্যাদের জন্য আলাদা আসনের দাবি

Jumjournal
Last updated Oct 4th, 2020

685

featured image

জুম্ম জাতির নেতা মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা (মঞ্জু) নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত সকল জুম্ম জাতির অধিকার আদায়ের লক্ষে ১৯৭২ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারি “পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি” গঠন করে সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু করেন।

নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে অধিকার আদায়ের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ১৯৭৫ সালে ১৫ আগষ্টের পর দেশের রাজনৈতিক পথ পরিবর্তন হওয়ায় তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে জুম্ম জাতির স্বাধিকার আদায়ের লক্ষে তিনি সশস্ত্র শাখা “শান্তি বাহিনী” প্রতিষ্ঠা করেন এবং নেতৃত্ব দেন।

কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, ১০ নভেম্বর ১৯৮৩ সালে ভ্রাতৃঘাতী সংঘর্ষে বিভেদপন্থীদের আতর্কিত হামলায় তিনি নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন।

পরবর্তীতে তারই সুযোগ্য উত্তরসুরী অনুজ শ্রীজ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) মুক্তিকামী আন্দোলনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে জুম্ম জাতির মুক্তির জন্য সশস্ত্র “শান্তি বাহিনীকে” বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান

ফলশ্রুতিতে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সমস্যা ও ভূমি জটিলতা নিরসনের লক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও জন সংহতি সমিতির মধ্যে ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ ইং সালে স্বাক্ষরিত ”পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি” (শান্তিচুক্তি) নিঃসন্দেহে আশা জাগানিয়া ঐতিহাসিক চুক্তি।

উক্ত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে চীফ হুইপ জনাব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জনসংহতি সমিতির পক্ষে শ্রীজ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) ঢাকায় পার্বত্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

এই চুক্তির ফলে দীর্ঘ দুই দশকের অধিক সময় ধরে চলা পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান হয়।

চুক্তির শর্ত মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হলে শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) পরিষদে মাননীয় চেয়ারম্যান পদে আসীন হন।

উক্ত পরিষদে তঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধি মনোনীত সদস্য হিসেবে ডাঃ নীলু কুমার তঞ্চঙ্গ্যা অন্যান্য সদস্যদের ন্যায় বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন।

আন্তর্জাতিক পরিসরে প্রশংসিত স্বাক্ষরিত এই পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যত তাড়াতাড়ি যথাযথ পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হবে ততই দেশবাসীর সকলের জন্য মঙ্গলজনক হবে। দায়িত্বটা রাষ্ট্রকেই নিতে হবে।

উল্লেখ্য বিষয় যে, শান্তি বাহিনী প্রতিষ্ঠা লগ্নে তঞ্চঙ্গ্যা জাতির সন্তান প্রয়াত ক্যাপ্টেন হিলারী (রূপময় তঞ্চঙ্গ্যা), লেফটেন্যান্ট দুর্জয় (প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা)

ও প্রয়াত সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট জঙ্গি (রোমেল তঞ্চঙ্গ্যা) প্রমুখ ব্যক্তিগণ সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জুম্ম জাতির স্বাধিকার আদায়ের লক্ষে শান্তি বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন।

তাঁরা সকলে পাটির বিধিমতে প্রদত্ত শান্তি বাহিনীতে কমিশন র‌্যাংক পদ মর্যাদায় সামরিক অফিসার ছিলেন। এ ছাড়াও আরো অনেক তঞ্চঙ্গ্যা জাতির ছেলে তৎকালীন সময়ে সাধারণ সৈনিক হিসেবে শান্তি বাহিনীতে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আগে জনসংহতি সমিতি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সাথে চুক্তিতে ঐক্যমতে পৌছার জন্য অনেকবার বৈঠক হয়।

বৈঠকে জনসংহতি সমিতি কর্তৃক পেশকৃত পাঁচ দফা দাবীনামায় তৃতীয় পৃষ্ঠায় বর্ণিত ২(ক) ধারায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতির সাংবিধানিক স্বীকৃতির যে প্রস্তাব রাখা হয় তাতে একমাত্র তঞ্চঙ্গ্যা জাতিকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র অন্যান্য ১০টি জাতির নাম উল্লেখ করা হয়।

সেই জন্য তখন তঞ্চঙ্গ্যা জাতির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একটি স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

স্মারক লিপি

তঞ্চঙ্গ্যা জাতিকে আলাদা জাতি হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ আঞ্চলিক পরিষদে তঞ্চঙ্গ্যাদের জন্য আলাদা আসনের দাবিতে

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নিকট তঞ্চঙ্গ্যা জনগণের পক্ষ থেকে কতিপয় দাবীনামাসহ যে স্মারকলিপি ১৬/০১/১৯৯৭ ইং তারিখে পেশ করা হয়েছিল তা এরূপ :

দাবিনামা :

১। ২(ক) ধারায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরুং, বোম, পাংখো, লুসাই, খুমী, খিয়াং ও চাক প্রভৃতি ভিন্ন ভাষাভাষি দশটি জাতির সাথে তঞ্চঙ্গ্যা জাতির সাংবিধানিক স্বীকৃতির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হোক।

২। উপধারায় জনসংখ্যানুপাতে তঞ্চঙ্গ্যাদের জন্য যথাযথ সংখ্যক আসন সংরক্ষণ করা হোক। বাংলাদেশে বসবাসরত তঞ্চঙ্গ্যা জনগণের পক্ষে উক্ত স্মারকলিপিতে নিম্নলিখিত ব্যক্তিগণ স্বাক্ষর করেন।

১। বাবু প্রসন্ন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা ২। বাবু বীর কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ৩। বাবু রতি কান্ত তঞ্চঙ্গ্যা ৪। বাবু রূপময় তঞ্চঙ্গ্যা ৫। বাবু অনিল চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা ৬। বাবু সুদত্ত বিকাশ তঞ্চঙ্গ্যা এবং আরও অনেকে উক্ত স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন।

Traditional attire of Tanchangya
স্বজাতীয় পোষাকে তঞ্চঙ্গ্যারা, ছবিঃ বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা জাতীয় ঘিলা খেলা গোল্ডকাপ টুর্ণামেন্টের ফেসবুক পেজ

লেখক পরিচিতি: মিলন কান্তি তঞ্চঙ্গ্যা। কর্ণফুলী সরকারি কলেজের শিক্ষক, যুগ্ম আহ্বায়ক- তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা কমিটি ও সহ-সভাপতি- কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ তঞ্চঙ্গ্যা কল্যাণ সংস্থা।

জুমজার্নালে প্রকাশিত লেখাসমূহে তথ্যমূলক ভুল-ভ্রান্তি থেকে যেতে পারে অথবা যেকোন লেখার সাথে আপনার ভিন্নমত থাকতে পারে। আপনার মতামত এবং সঠিক তথ্য দিয়ে আপনিও লিখুন অথবা লেখা পাঠান। লেখা পাঠাতে কিংবা যেকোন ধরনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন - jumjournal@gmail.com এই ঠিকানায়।

আরও কিছু লেখা